বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাঝে মাঝে ফেরিঅলার হাকডাক শোনা যায়। একদল কাক জটলা পাকিয়েছে ডাস্টবিনের ওপর। লোকটা এসে রাস্তায় বসে পড়ে। চোখ দুটো লাল টকটকে। ডাস্টবিনে উঁকি দেয়, হয়তো খাবারের খোঁজে। ক্লান্ত দেহ এলিয়ে শুয়ে পড়ে দোকানের সিঁড়িতে।
সে লোকটাকে দেখে। কে এইলোক… শুধু ভাবে মনেমনে। তুমি কে?
টুকু, টুকু সোনা, তুমি কোথায়?
শোনো, মা ডাকছে। যেও না কিন্তু , আমি আসছি এখনি। টুকু ভেতরে যায়।
টুকু সকাল থেকে কিছুই খাওনি, শিগগিরই কিছু খেয়ে নাও, দিদা জানতে পারলে বকা দেবে কিন্তু। মা, দিদা শুধু খেতে বলে কেন? না খেলে তুমি বড় হবে না যে ! আরতি পাউরুটিতে জেলি মেখে প্লেটে রাখে। টুকু একদৌড়ে বারান্দায় এসে পড়ে, তুমি রুটি খাবে?
নাহ!
তোমার নাম কী?
টুকু তুমি কার সাথে কথা বলো? নাস্তা শেষ করে যাও। আসছি মা।
আমার নাম টুকু, তোমার নাম বলো না কেন?
নাম নাই, কোনো নাম নাই! বিড়বিড় করে বলে লোকটা।
আমি তোমায় কী বলে ডাকব?
আরতি ছেলের পাশে এসে দাঁড়ায়। জটাধারী লোকটার দিকে চোখ পড়ে তার। লোকটা একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আরতি দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। শাড়ির আঁচলটা ভালোভাবে টেনে রাখে। টুকুর হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়। তোমাকে না বলেছি অচেনা কোনো লোকের সাথে কথা বলবে না। ঘরে বসে খেলো।
টুকুর মন খারাপ হয়ে যায়। খেলনাগুলো একপাশে পড়ে আছে।
০২.
অফিস থেকে ফিরছে সে। তার অপেক্ষায় আছে ছেলেটা। তপন ট্রাফিক সিগন্যালে বসে ভাবে আজ টুকুর সাথে কী গল্প করবে। একরত্তি টুকুসোনা, আজকাল অনেক কথা শিখেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প শুনতে চায়। তপনের গল্পের ভাণ্ডার সব শেষ। মাঝেমাঝে অফিসের কথা বলে টুকুকে। আরতি হাসে আর বলে, এসবকী বলছ, ও কি কিছু বোঝে?
আমার আর কোনো গল্প নেই যে!
ওকে কিন্ডারগার্টেনে পাঠাতে চেয়েছিল আরতি। তপন রাজি হয়নি। এটা খেলার বয়স টুকুর, এমনিতে ভালো আছে আমার ছেলে! একবারে সামনের বছর স্কুলে ভর্তি করব। কী বলো?
০৩.
দরজা খোলার শব্দে একদৌড়ে বাবার কাছে পৌঁছে যায় সে, বাবা বাবা আমরা কি এখন বেড়াতে যেতে পারি?
নিশ্চয়ই! আমি তোমার দিদার সাথে চা খেয়ে তার পর বেরুবো, কেমন? তপন ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
বাবাকে ছাড়ো, ছাড়ো টুকু, যা তুই হাত মুখ ধুয়েনে। জয়াকে ফোন করিস, বেশ ক’বার খুঁজেছে তোকে, তোর মোবাইল কি বন্ধছিল? ছেলের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলেন উমা দেবী। একমাত্র মেয়েটিকে হোস্টেলে পাঠিয়ে ঢাকায় ছেলের সংসারে আছেন। এ বাড়িতে টুকুর সবচাইতে কাছের মানুষ তিনি। তবে অভিমানটাও দিদার সঙ্গেই বেশি। তাঁর শাদা শাড়ির আঁচল ধরে বসে থাকে টুকু। মাঝেমাঝে ঘুমিয়ে পড়ে দিদার কোলে। আরতি তোমার ছেলেকে নিয়ে যাও দেখি, ও আমার শাড়ির ভাঁজ নষ্ট করে দিলো যে। আরতি মুখ টিপে হাসে। আর টুকু ঘুম থেকে জেগেই দিদাকে খোঁজে। ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিল বলে চিৎকার করে কাঁদে। আরতি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ছেলেরা কাঁদে না বাবা। কে বলেছে, ওই লোকটা তো রোজ কাঁদে,
ওই যে ওই রাস্তার ধারে। মতি ফিক করে হেসে বলে ওই ব্যাডা তো পাগল, কান্দেহাসে, কত কিসু করে!
পাগল কী মা?
কিছু না বাবা, তুমি ঘুমাও। মতি যা এখান থেকে। কাজের ছেলেটাকে তাড়িয়ে দেয় সে। লোকটার কথা মনে করতেই গা শিউরে ওঠে আরতির।
০৪.
বিকেলে বাবার হাত ধরে বাইরে যায় সে। বাড়ির গেট থেকে বেরুলে টুকুর আনন্দ যেন আর থামে না। আকাশে লালনীল ঘুড়ির মতো টুকুর মনেও ঘুরে বেড়ায় কতশত ফড়িং। তবে নাটাইয়ের মতো বাবা তার হাত ধরে রাখে।
মতি গেট বন্ধ করে একদৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা রান্নাঘরে ঢোকে, মামানি টুকু ভাইয়ানা ওই পাগলাডারে একটা চকলেট দিসে। তপন মামাই ওই ইদরিসের দোকান থাইক্যা কিনা দিসে।
ওর বাবা না কিছুই খেয়াল করে না, ছেলেটা কী করে, কার সাথে মেশে! আমি আর পারি না।
টুকু বাবার হাত ধরে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় সিএনজি অটোরিক্শাতে মন পাওয়া যায় না। লোকটা চকলেটের মোড়ক খুলে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।
তুমি আমাদের সাথে যাবে? চলোনা।
নাহ্! লোকটা হাসিহাসি মুখ করে বলে।
তপন কিছু বলে না। ছেলের হাত ধরে সিএনজিতে উঠে বসে, টুকু, তুমি ওকে চেনো?
হ্যাঁ বাবা, ও তো এখানেই থাকে, দোকানের সিঁড়িটা আছেনা ওখানে ঘুমায়। আমি আর ও রোজ গল্প করি। বাবা, মতি বলে, ও নাকি পাগল। পাগল মানে কি খারাপ, বাবা?
ঢাকা শহরের শব্দদূষণ বেড়েছে আজকাল। তপনের উত্তরটা টুকু আর শুনতে পায় না।
০৫.
মতি কাল দেশে যাবে। সকাল থেকেই কাজে মন নেই তার। দিদার শুপারির কথা দোকানে গিয়েও ভুলে গেছে।
ছাদের কাপড়গুলো নিয়ে আয়, মতি। আরতি রান্নাঘর থেকে চেঁচায়। রেডিওতে পুরোনো দিনের গান বেজে ওঠে। ভলিউম বাড়িয়ে দেয় সে।
আমি তোমার সাথে ছাদে যাই, মতি?
নানা মামানি ছাদে যাইতে মানা করছে না, ভাইয়া!
বারান্দায় মোড়াতে তাকে বসিয়ে রেখে ছাদে যায় মতি। টুকুর হাতে একটা চাররঙা বল।
০৬.
তপন বাড়ি ফিরে টুকুকে খোঁজে। মতি, আরতি, দিদা সবাই টুকুকে খোঁজে। আরতি ছাদে দৌড়ে যায়। মতির ভয়ে কান্না পায়। টুকুভাইয়া, ও টুকু ভাইয়া…। ওর পেছন পেছন ছাদে গেলো না তো! দিদা চিৎকার করে মতিকে ডাকে, তোকে না বলেছি ওকে চোখে চোখে রাখতে! আমার ঘরের খাটের ওখানটায় দেখতো দেখি।
আরতি চোখ মুছে আর এঘরওঘর ঘুরে বেড়ায়। তপন ইদরিসের দোকানের দিকে খোঁজে। সতীশ বাবু তপনের ফোন পেয়ে চলে এসেছেন। কাকা, তপন মামার মাথা ঠিক নাই। আমরা অহন কী করুম?
বারান্দায় এসে দাঁড়ায় আরতি, মা, ওমা ওই লোকটা নেই এখানে! ওই আমার টুকুকে নিয়ে গেছে সতীশ দা!
শাশুড়ির হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে আরতি।
কে, কে? সতীশ বাবু অবাক হয়ে বলেন।
পাগলা, এহানে থাকে।
মতির গালে এক চড় বসিয়ে দেয় আরতি, তুই নিশ্চয়ই গেটটা খোলা রেখেছিলি!
মতির কিছুই মনে পড়ছে না। মতির কষ্ট হচ্ছে।
০৭.
সতীশ বাবু টুকুর একটা ছবি নিয়ে থানায় গেছেন। সাথে মতিকে পাঠিয়েছে আরতি। পাগলটার বর্ণনা হয়তো দিতে পারবে সে।
০৮.
সন্ধ্যে হয়ে এলে ঘরে ফেরে তারা। টুকুর খেলনাগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। আরতি মেঝেতে শুয়ে আছে। আজ পুজো দেওয়া হয়নি। পূর্ণিমার আলোয় তার চোখের কোণে বিন্দুবিন্দু মুক্তকণা দেখা যায়।
০৯.
বাড়িতে চুলো জ্বলেনি। মতির ক্ষুধা পায়, তপন মামা, কয়ডা টাকা দেন বিস্কুট খামু।
তপন পাঞ্জাবির পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে বলে, তুই কিছু খেয়ে শুয়ে পড়, কাল সকালে তো তুই বাড়ি যাবি।
মামা আমি যামু না মামা, আমি আর বাড়িত যামু না।
রাত গভীর হয়। তপন বারান্দায় বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মতির হাতে বিস্কুটের প্যাকেট, মামা বিস্কুট খাইবেন?
মতি, মা কিছু খেয়েছে আজকে?
উমাদে বীর ক্ষুধা নেই, কোনো ঘুম নেই।
পূর্ণিমার এইরাতে চারিদিকে শুধু আঁধারে ঘেরা।
১০.
গেটে কে যেন শব্দ করে। মতি চিৎকার করে ওঠে, টুকু ভাইয়া, টুকু ভাইয়া। মতি দৌড়ে গেট খোলে। জটাধারী লোকটার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে টুকু। বাড়ির সবাই ছুটে আসে সিঁড়ির কাছে। টুকু লোকটার হাত ধরে ওপরে উঠতে থাকে। কোথায় ছিলে সারাদিন, বাবা? আরতি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
স্কুলের পাশে একটা মাঠ আছে না ? ওখানে খেলতে গিয়েছিলাম, মা।
টুকুর সারাগায়ে ধুলোবালি মাখা। লোকটারও।
এটুকু ছেলেকে নিয়ে তুমি কোথায় গেলে, আমরা খুঁজেখুঁজে হয়রান। খরবদার ওর ধারে কাছেও আসবে না। উমা দেবীর গলা কেঁপে ওঠে।
মা, ভেতরে যাও তো। মতি, ওকে কিছু খেতে দে।
লোকটা নির্বিকারে দাঁড়িয়ে আছে। মতি রান্নাঘরের দিকে যায়।
পানি, একটুপানি…। লোকটা মৃদুস্বরে বলে ওঠে।
আরতি গ্লাসে জল ঢালতে গিয়ে শাড়িতে ছলকে পড়ে। লোকটা একপলকে তার দিকেই চেয়ে আছে।
১১.
ছেলেকে বিছানায় রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় আরতি। দোকানের সিঁড়িতে ঘুমিয়ে আছে সে। শিশুর মতো। টুকুর মতোই কুঁকড়ে গোল হয়ে শুয়ে আছে লোকটা। তপন এসে আরতির কাঁধে হাত রাখে।
শোনো তপন, এই লোকটাকে এখান থেকে তাড়াও। আজ ভালোয় ভালোয় টুকু বাড়ি ফিরেছে। ওকে যদি অন্য কোথাও নিয়ে যেত? আরতি আর কিছুই ভাবতে পারে না। এখন এসব ভাবার সময় নয়।
আরতিকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়। শিশুরা ঘুমিয়ে থাকলে কী নিষ্পাপ দেখায়, তাই না? আরতি, তুমি কি লোকটাকে চেনো?
১২.
দিদার পাশে চেয়ার টেনে বসে টুকু।
কাল তুই কী করলি ওই পাগলটার সাথে? উমা দেবী টুকু সোনার গাল টিপে আদর করে।
ছিঃ! পাগল বলছ কেন, ও তো আমার বন্ধু! দিদা জানো মাঠের দুষ্টছেলেরা ওকে নাইট ছুড়ে মেরেছে। কেন ওরা এমন করে?
টুকুকে জড়িয়ে ধরে দিদা, ওরা ভালো নয়। তাই বলে তুমি ওর সাথে কোথাও যেও না, তোমার ওই বন্ধু সব কিছুই ভুলে গেছে। ওর ছেলের কথা বলল যে। ওর সবই মনে আছে দিদা তুমি জানো না।
মতি মনযোগ দিয়ে ওদের কথা শোনে। সতীশ কাকা, আমি আর তপন মামা আমরা কত জাগা খুঁজছি। টুকু ভাইয়া, আপনার ছবি নিয়া আমরা পুলিশের কাছে গেসি।
মতি, তুমি হারিয়ে গেলে তোমাকে আমি খুঁজে বের করব।
মতি ফিক করে হাসে!
১৩.
বারান্দায় নতুন একটা ফুলের টব রেখেছে আরতি। আজ থেকে ওখানে টুকুর বল খেলা নিষেধ। বারান্দায় এসে দাঁড়ায় টুকু। লোকটার সাথে কথা বলে। তাদের দুজনের একান্ত কথা। টুকুর শুধু হাসি পায়। সেও মিটিমিটি হাসে। ওদের কথা কেউ বোঝে না। মতিও না।
১৪.
টিপটিপ বৃষ্টি পড়ে। টুকু বৃষ্টি দেখে। গাছের ডালে দুটো চড়ুই পাখির ডানা ঝাপটানো দেখে। টিপটিপ থেকে টাপুরটুপুর, তারপর দমকাহাওয়া। টুকুর গায়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগে। বৃষ্টিতে বারান্দা থেকে হাত বাড়িয়ে দেয়। লোকটা বৃষ্টিতে ভিজছে। মতি টুকুকে ঘরে নিয়ে যেতে চায়, ভাইয়া তুফান আইসে ঘরে চলেন, মামানি ডাকে।
লোকটা শীতে কাঁপছে। প্রচণ্ড কাঁপছে। চোখের কাপনে ঠিকমতো টুকুকে দেখতে পায় না। টুকু দৌড়ে ঘরে যায়।
চুলোয় খিচুড়ি চাপিয়েছে আরতি। রহিমা বুয়া আজ আসেনি।
মা, ওকে ঘরে নিয়েআসি?
কাকে?
ওই যে আমার বন্ধুকে! ও কাঁপছে।
আরতি কোনো কথা বলে না। টুকু কাঁদে, মায়ের শাড়ি ধরে কাঁদে। দিদার কাছাকাছি যায়, দিদা ওকে ঘরে নিয়ে আসোনা, ওর শীত লাগছে।
টুকুর গায়ে একটা লাল সোয়েটার পরিয়ে দিয়ে বললেন, ওকে ঘরে এনো না, টুকু।
দরজায় বেলের শব্দ পেয়ে সিঁড়ির দিকে দৌড়ে যায় টুকু।
আমার বন্ধুকে এখানে নিয়ে আসোনা, বাবা। টুকুর চোখে জল টলমল। মতি দরজাটা বন্ধ করে দে। টুকু চিৎকার করে কাঁদে। তপন ছেলের হাত শক্ত করে ধরে ওপরে উঠে যায়। ঝড়ের শব্দ ছাপিয়ে টুকুর কান্নার শব্দ বাড়িময় ঘুরপাক খায়। ক্লান্ত অবশ্রান্ত টুকু একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
১৫.
ছোট্ট একটা ফুলের কলি এসেছে নতুন টবে। আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় টুকুর। লোকটাকে খোঁজে। কোথাও দেখতে পায় না। রান্নাঘরে এককোণে শুয়ে থাকা মতিকে জাগিয়ে তোলে টুকু। আমার বন্ধুকে দেখেছ? কোথাও দেখি না কেন চোখ মুছতে মুছতে মতি বলে, এত সকালে উঠসেন কেন, ভাইয়া?
টুকু ওর হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়। সিঁড়ি ঘরে, রাস্তায়, দোকানের আশেপাশে কোথাও দেখা যায় না।
আরতি রান্নাঘরে ঢোকে। চিরতার রস গ্লাসে ঢেলে উমা দেবীর হাতে দেয়। আজ এত সকালে উঠলে যে, সোনা? মন খারাপ কেন?
আমার বন্ধুকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও দিদা।
ইদরিস মিয়া দোকান খোলে। টুকু বলে, এই যে শোনো, ও কোথায়?
কে, ওই পাগল? ওরে খোঁজো কেন?
ও আমার বন্ধু, ওকে পাগল বলবে না। টুকু কাঁদে।
১৬.
এত চেঁচামেচি কিসের? তপন আর আরতি বারান্দায় চলে আসে।
ওই ব্যাডার জন্য কান্দে টুকু ভাইয়া—মতি বলে।
আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাই টুকু, ও এখানেই কোথাও আছে হয়তো। চলে আসবে।
আমার বন্ধু হারিয়ে গেছে খুঁজে আনো, বাবা। মতিকে বলো খুঁজে আনতে। উমা দেবী মতিকে ইশারা করে। টুকু কান্না থামিয়ে দৌড়ে ঘরে যায়। মতির হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলে এই নাও আমার বন্ধুর ছবি। তুমি এটা নিয়ে থানায় যাও। আমাকে যেমন খুঁজেছিলে।
টুকুর কাঁচা হাতে আঁকা ছবি জটাধারী ওই লোকটার। নতুন ফুলের টব, তার একপাশে আরতি আর লাল সোয়েটার পরা টুকু। আরতি অবাক হয়ে ছেলের মায়াভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
১৭.
মতি রাস্তায় নামে। জানে না তার গন্তব্য! কোথায় খুঁজবে লোকটাকে? উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায় সে। চৌরাস্তার পাশে একদল লোকের ভিড়। কিসের এত ভিড়? অন্য সময় হলে দাঁড়িয়ে পড়ত ওখানে। এখন তার সময় নেই। দুফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। হাতের কাগজটা শক্ত করে ধরে রাখে মতি।