অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কবি মুজিব ইরমের কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও আলোচনামূলক একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। ২৪ জুন পূর্ব লন্ডনের শাহ কমিউনিটি সেন্টারে ‘কবিকণ্ঠ’-উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়।
কবি হামিদ মোহাম্মদের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন কবি মাশুক ইবনে আনিস, কবি ফারুক আহমেদ রনি, কবি জফির সেতু, কবি টি এম আহমেদ কায়সার, কবি মিল্টন রহমান, লেখক সারওয়ার ই আলম প্রমূখ। কবিতা পাঠে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী পপি শাহনাজ, অজন্তা দেব রায়, মোস্তাফা জামান নিপুন। মুজিব ইরম রচিত পুঁথি পাঠে অংশ নেন কবি মুজিবুল হক মনি। এছাড়া সপাঠ ও কথনে অংশ নেন কবি মুজিব ইরম।
অতিথি আলোচক সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি জফির সেতু বলেন, মধ্যযুগে কবি আলাওল আরকান রাজ্যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা করে যে বাংলাসাহিত্যের বিকাশ সাধন করেছিলেন, এখন বিলেতে বসে কবি মুজিব ইরম একইভাবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। তার ভিন্নমাত্রার এ কাজ অবশ্যই ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত হবে।
মিল্টন রহমান বলেন, মুজিব ইরম আত্ম-অনুসন্ধানের যে নতুন অন্তর্জাগতিকতা নির্মাণ করেছেন, তা দেশকাল পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে। তার কবিতায় ‘হোমসিকনেস’ স্বদেশপ্রেমকে উসকে দিতে পেরেছে।
কবি টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, প্রথা ভাঙার যে তর্কবিতর্ক নব্বইয়ের লিটল ম্যাগ আন্দোলনে আমরা করেছি, সেই বাকবদলের সফল কবি মুজিব ইরম। কবিতার শরীর নির্মাণ কৌশল বদলে দেয়া, অন্তর জাগতিক কাব্যস্পর্শকে পাঠকের মনে স্পন্দিত করা, নতুনভাবে বলা-সবই মুজিব ইরমকে স্বার্থক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে তার কবিতা।
সারওয়ার ই আলম বলেন, মুজিব ইরম কবি হওয়ার জন্য ঢাকায় যান। তিনি সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, প্রচলিত ফর্মে বা ধারায় তার স্বপ্ন পূরণ হবে না, তাই তিনি চ্যালেঞ্জ নেন। তিনি লিখতে শুরু করেন, নিজের মতো, নিজেকে নিয়ে অর্থাৎ,তার জন্মস্থান গ্রাম নালিহুরীর হালটের কাঁদামাটি, ছায়া উজ্জ্বল বটমূল, মনুনদীর জল, আখালুকির থৈথৈ ঢেউ, সেই শৈশবস্মৃতি। কবি মাশুক ইবনে আনিসের বক্তব্যে উঠে আসে সাহিত্য জগতের চলমান ঈর্ষা পরায়ানতার কথা।
কবি ফারুক আহমেদ রনি বলেন, কোনো প্রকৃত কবিকে নিয়ে বা মুজিব ইরমকে নিয়ে এধরনের একক আয়োজন বিলেতে এই প্রথম। কবিকণ্ঠ ইতিহাস সৃষ্টি করলো।
অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রাণ ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে পাঠ। পপি শাহনাজের হৃদয়গ্রাহী পাঠ ছিল মুগ্ধ করার মতো। হাসিনা আখতার, অজন্তা দেব রায়ের কবিতা পাঠ উপস্থিত দর্শকদেও মনোযোগ কাড়ে।অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে কবি মুজিবুল হক মনির পুঁথিপাঠ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।ফুল-দেওয়ার মুহূর্তটি বর্ণিল ও আবেগঘন হয়ে ওঠে উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের যোগদানে।
উল্লেখ্য, কবি মুজিব ইরম ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালে মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার। বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক, কবি দিলওয়ার সাহিত্য পুরস্কার। কবিবংশ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। শ্রীহট্টকীর্তন কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার।