ডাহুক ডাকে নিঝুমপুরে
চাঁদের গায়ে প্রেমের আলো ছুঁইয়ে দিলাম
পদ্যে-পদ্যে সত্যভাষণ জড়িয়ে দিলাম
তোমায় আরও নিবিড় করে পাইয়ে দিলাম
এখন তুমি কেমন আছ বলো?
এক বিকেলের জড়িয়ে যাওয়া অঙ্গুরীয়
জলের বুকে কাঁপতে থাকা বাড়িটিও
অপেক্ষাতে নিভতে থাকা দিনের আলো
এখন তো আর জ্বালায় নাকো, বলো।
দারুণ তোড়ে বাতাস এলো, তার সাথে যে ধূলিটিও
ধূলির সাথে স্বপ্নটিও শবের সাথে কফিনটিও
হারাওনি তো, কফিনটিতে ঠুকে দেওয়ার পেরেকটিও?
এই তো পেলে বেঁচে থাকার আগুনটিরে, বলো!
হৃদয় শিখায় প্রদীপ জ্বেলে ঝড়ের রাতে পথের শেষে
অনেক করে ভালোবেসে শূন্য ঘরে সুবাস ঢেলে
গায়ের রঙটি আলো করে নিবিড় হয়ে একলা রাতে
কেউ তো এসে দাঁড়ায় কাছে, বলো!
হাড় হা-ভাতের গদ্যগুলো মুখর সকল পদ্যগুলো
অঙ্গে জড়ায় শাড়িটিও, নাকছাবিটির বৈশাখীও
ঝড়ের গায়ে উড়িয়ে দিলাম। ভালোবাসার ক্লান্তিটিও
নিলাম করে, এখন তুমি ভালোই আছ, বলো!
তবু কেন আঁধার দেখি তোমার চুলের অন্ধকারে
ডাহুক ডাকে, ভরদুপুরে তোমার বুকের নিঝুমপুরে
মুখের ছাঁদে মাতাল বাতাস কেমন যেন নেশায় টলে
ভরা কলস হাতের কাছে, তবু কেন সুরাখ ডাকে?
ডুব সাগরে আর কতদূর যাবে, বলো!
মরণ
খুব কাছে বসে তুমি দেখে গেছ—আমার দুচোখ
চোখের ভেতর বাসা। আর সেই পাখির বাসায়
স্বপ্নের নিহত দেহ। খুব কাছে এসে একদিন
খাবারে দিয়েছ বিষ। রাতের গলায় নীলকণ্ঠ
বেঁধে দিনের খোঁজে দিয়েছ গোপনে ছেড়ে। আর
কি কখনো ভোর হয়? কাছে এসে যেদিন বলেছ
ভালোবাসি। পরজন্মে বুঝে গেছি—সে ছিল মরণ।
সঙ্গম-২
তোমার খোলা শরীর তোলে ঝড়।
তবু মনে রাখি সেই দিন
অঞ্জলিতে ধরে রাখি
বৃষ্টি জলের মতোন নিকানো উঠোন।
আকাশে ছায়ায় গাঢ় হয় অন্ধকার।
জ্বলে ওঠে আমাদের মুখ
আর সাথে রয় সাতটি অমরাবতী…
তবু সরে সরে গেলে ভেসে ওঠে ঠিক
দূরের কোনো অনঙ্গ আফ্রোদিতি
তার নাভীর গভীরে জ্বলে ওঠে কাম
সন্ধ্যা কিংবা শুকতারা।
কম্পিত ঠোঁট অথবা টিয়াপাখি নাকে
ঝুলে থাকে জোছনার নাকছাবি।
অথচ আমি প্রণয়ে ভুলে যাই পথ
. অধরা সঙ্গম।
চিন্তাসূত্রে প্রকাশিত কোনও লেখা পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ভালো লাগলো
আপনাকে ধন্যবাদ
তিনটি কবিতা-ই মনোযোগ গিয়ে পড়লাম।স্বরবৃত্তে রচিত ‘ডাহুক ডাকে নিঝুমপুরে’ পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, মনের পর্দায় আস্তে আস্তে আন্মোচিত হচ্ছে মানবজীবনের অন্তহীন রহস্য। আরও একটি বিষয় আন্দোলিত করেছে আমাকে, সেটি হলো—স্বরবৃত্তে এমন গুরুগম্ভীর কবিতা রচনা যায়। অবশ্যই আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, শঙ্খঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়েরও স্বরবৃত্তে অনেক ভারী কবিতা রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে এসে, যখন প্রায় ছন্দবিরোধী কতাবার্তায় হামেশায় মশগুল থাকতে দেখা যাচ্ছে তরুণ কবিখ্যাতি-প্রত্যাশীদের, তখন নিরূপিত ছন্দে এমন নিটোল কবিতা, মরুর বুকে তৃষ্ণার জলের মতোই মনে হয়।
দ্বিতীয় কবিতা অক্ষরবৃত্তে রচিত, ‘মরণ’। এই কবিতার বিষয়বস্তু অনুসারে, পঙ্ক্তিবিন্যাস-পর্ববিন্যাস যেকোনো নিবিড়পাঠককে মুগ্ধ করবে। বিশেষত মানবজীবনের জটিল রহস্যকে এমন নিবিড় পর্যবেক্ষণে তুলে ধরায় কবিতাটি হয়ে উঠেছে চিরায়ত অনুভবের স্মারক।
আর তৃতীয় কবিতা ‘সঙ্গম-২’? সে তো মনে হলো, এক মহাজীবনের আখ্যানের ক্ষুদ্র সংস্করণ। কেবলই মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। এমন তিনটি পরিপূর্ণ কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য কবিকে ধন্যবাদ। কিছু ধন্যবাদ চিন্তাসূত্রেরও প্রাপ্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। এমন নিমগ্ন পাঠকও আজকাল বিরল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
শাপলার কবিতা এই প্রথম পড়লাম। কবিতাগুলো দুরন্ত সুন্দর । শাপলার জন্য শুভ কামনা।