বিষধর সাপকে বসে আনা মানুষের কাছে চিরকালই আকর্ষণীয়। তার ওপর যদি একের পর এক প্রদর্শন করা হয় বিষধর সাপের নানা কৌশল, তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক ঝাপাং খেলা (সাপ খেলা) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহে।
সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাংগা গ্রামে প্রায় ৩০০ বছর ধরে বাগদি সম্প্রদায় মনসার পূজা উপলক্ষে আয়োজন করে আসছে ঝাপাং খেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও দুই দিনব্যাপী খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোট ১০টি দল অংশগ্রহণ করে।
বাদ্যের তালে তালে, বাঁশির সুরে একে একে ঝুড়ি ও হাড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরাসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। মনসা মঙ্গলের পালা গানসহ বিভিন্ন গানের সাথে বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নাচতে হয়। এর সঙ্গে ফণা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ।
ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকার সব বয়সী নারী-পুরুষ উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন এই খেলা। আর খেলাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। বসে ছোট আকারের মেলা।
১০ সাপুড়ে দলের অর্ধশতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কসরত। আর এই দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা। অনেকে জীবনের প্রথম আবার অনেকে অনেক দিন পর দেখছেন এ খেলা। এই খেলা দেখে খুবই আনন্দিত তারা।
স্থানীয় সুন্দরী দাস জানান, তিনি খেলা দেখতে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। প্রতিবছর এই খেলার আয়োজন করে বাবা-কাকারা। আর সাপ খেলা দেখে তিনি খুবই আনন্দিত।
মুন্ন জানান, শুধু সাপ খেলাই নয়। হাজার হাজার মানুষ এখানে জড়ো হয়। অনেকের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। এককথায় এ খেলাকে কেন্দ্র করে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়।
ঝিনাইদহের উত্তম সাপুড়ে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এই ঝাপাং খেলা করে আসছি। মানুষকে আনন্দ দেওয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য। আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাপাং খেলায় অংশ নেই।’
খেলার আয়োজক কমিটি ও বৈডাংগা মনসা মন্দির কমিটির সভাপতি প্রেম কুমার জানান, গ্রামবাংলার হারানো ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এই আয়োজন। দেশের প্রতিটি গ্রামে এই খেলার আয়োজন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।