চরিত্র :
কনে
সখি
মা
বাবা
ছেলে
অচেনা কয়েকজন
নেপথ্য : হকার
কোলাহল : জনতা
প্রথম দৃশ্য
[শ্রমিকের ব্যারাকের মতো ছোট্ট একটা ভাড়া রুম। দেয়ালের ওপর টিন শেড। চৌকির পাশে মিটসেফ, ওপরে টিভি। পাশে দেয়ালে একটা ঘড়ি। পাক পাঞ্জাতনের ছবি দেয়ালে। চৌকিতে চারজনের থাকার ব্যবস্থা। চৌকি আর দরজার মাঝে মাত্র দেড় হাত পরিমাণ জায়গা। এ বাড়িতে আজ বিয়ে। কনেকে বউ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাইরে লোকজনের মৃদু কোলাহল। বাইরে পেপারওয়ালার ডাক শোনা যাচ্ছে। পেপারওয়ালার হাঁকের স্বর ক্রমে উচ্চে উঠতে থাকে।]
নেপথ্য : পেপার, পেপার আছে।
[কক্ষে সখির প্রবেশ]
কনে : দেখ তো, বাইরে চিল্লায় কে?
[সখি জানালার পর্দা তুলে হকারের সাথে কথা বলে]
সখি : অই মিয়া, গলির ভিতর আসছেন ক্যান? এই বাড়িতে কেউ পেপার রাখে না। যান।
হকার : পেপার, পেপার আছে।
[হকারের কণ্ঠ কিছুক্ষণ একই স্বরগ্রামে শোনা যায়। পরে দূরে মিলিয়ে যেতে থাকে।]
কনে : তুই দেরি করলি ক্যান সই?
সখি : রাস্তায় দেরি হয়ে গেল। রওনা তো সময় মতোই দিছি।
কনে : আমার কাছে একটু বস।
সখি : তোর কি ভয় লাগতাছে?
[সখি কনের পাশে বসে। কনে তার একটা হাত শক্ত করে ধরে রাখে। সে বুঝতে পারে কনে ভয় পাচ্ছে।]
কনে : আমার জানি কেমন লাগতাছে সই। কাল রাতে ঘুম হয় নাই। শেষ রাতে স্বপ্নে দেখলাম বড় একটা জাহাজ পানিতে ডুবে গেল। আমার গলা শুকিয়ে গেছে। উঠে দেখি ঘরে খাওয়ার পানি নাই। মুখে থুতু জমিয়ে গিললাম। এতে গলা একটু ভিজল।
সখি : ঘাবড়াইস না বইন। তোর মন এমনিতেই দুর্বল। মনে হয় কোনো ছবি দেখছিলি টিভিতে, সেই সিনই স্বপ্নে আইসা তোরে ভয় দেখাইছে।
কনে : তুই আমার পাশেই থাক।
সখি : আচ্ছা, তুই ডরাইস না। আমি আছি। বরযাত্রী কখন আসব?
কনে : বিকাল তিনটা তো বাজতেই পারে।
সখি : কী নিয়া আসব? তোর জন্য টেকসি আনব?
কনে [দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে]
: সেই ভাগ্য কি আমাদের আছে? এক বাসেই সবাই আসব। লোক তো বেশি না, সব মিলে চল্লিশজন হবে। বন্ধুবান্ধবসহ। এক বাসই তো লাগে। নাকি?
সখি : আচ্ছা বইন, তোরে এতটা কথা জিগাই, পরে তো আর সময় নাও পেতে পারি। তোর বররে কী কী দেওয়া-থোওয়ার কথা? নগদ দিতে হইব?
কনে : দুই লাখ টাকা, এক ভরি স্বর্ণ, চল্লিশজন মানুষ খাওয়ায়া, আংটি-পোশাক-ঘড়ি। নগদ টাকা, আংটি- পোশাক-ঘড়ি দেওয়া হয়ে গেছে। কালকে আমার শ্বশুর এসে নিয়া গেছে।
সখি [মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখে কিছুক্ষণ]
: তোর বরের জন্য তো কতকিছু দিতাছে, আমার কী হইব গো বইন? আমার বাপে তো আরেকটা হাঙ্গা কইরা সংসার থিকা সইরা গেছে।
কনে : চিন্তা করিস না সই, আল্লাহ সবার ব্যবস্থাই করব। আচ্ছা, তুই কি খাইছস? বাড়িওলাদের বারান্দাসহ একটা খালি রুমে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হইছে, তুই খাইয়া আয়। পরে তর সাথে কথা আছে। আর সময় পাবি না। লোকজন আসলে পারবি না।
সখি : আমার জন্য ভাবিস না, তোর খাওয়া হইছে নি ক। দানাপানি কিছু পেটে দিছস?
কনে : পেটে কি ভাত যায়?
[মায়ের প্রবেশ]
সখি : কেমন আছেন খালা?
মা : বোঝোই তো কেমন আছি। চিন্তা মাথায় নিয়া কি মানুষে ভালা থাকতে পারে? চিন্তাটা দূর করতে পারলে না ভালা থাকি।
সখি : হ, খালা ঠিকই কইছেন। আপনেরা কিছু খাইছেন? অয়তো মনে হয় কিছু খায় নাই। লোকজন আসার আগে কিছু খাইয়া লন।
মা : তুমি লইয়া বহো। দুইজনে খাও। আমি রান্না ঘর থিকা খাওন আইনা দিতাছি।
[মায়ের প্রস্থান]
কনে : তুই ব।
সখি : কত টাকা খরচ যাইব রে?
কনে : তিন লাখ তো যাইবই।
সখি : দুলাভাই বিদেশে আছিল? এখন কী করে?
কনে : বাজারে কাঁচামালের দোকান আছে। আগের ব্যবসাই ধরছে। বিদেশ থেকে আইসা অনেক পুরুষ পোলাই দেখি আজাইরা থাকে, আমার কাছে এইসব মানুষ দেখতে ইচ্ছা করে না। একটা কিছু করতে না পারলে কেমন পুরুষ? আমরা মাইরা কি আজাইরা থাকি কোনো সময়? অসুখ-বিসুখ নিয়াও রানতে হয়, পানি আনতে হয়, ঘরের সব কামকাজ করতে হয়। তয় হেরা ক্যান আজাইরা থাকব? বেশিদিন দেরি করে নাই, বাজারের একজন দোকানদার বুড়া মানুষ সেয় মারা গেছে, পরে কমিটির সাথে আলাপ কইরা সেই দোকানটা লইছে।
সখি : ভালা হইছে বইন। আইচ্ছা, এখন বাজে কয়ডা?
কনে ও সখি : [একত্রে] পোনে তিনটা বাইজা গেছে।
দ্বিতীয় দৃশ্য
[বাইরে একটা কামরাঙা গাছের নিচে কতগুলো প্লাস্টিকের চেয়ার। সবগুলোই খালি। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে মা আর বাবা]
মা : সাড়ে তিনটা তো বাজে। চিন্তা লাগতাছে।
বাবা : চিন্তার কী আছে, এক আধটু দেরি হইতেই পারে।
মা : তা হইতে পারে। তবু কেমন জানি লাগতাছে।
বাবা : আজাইরা চিন্তা কইরো না। আচ্ছা শোনো, তোমাগ বাড়ি থিকা আর কে কে আইছে?
মা : : সব ঘর থেকেই আইছে। আপনের লগে দেখা হয় নাই? বড় ভাইয়ে আইছে। মাইজ্জা ভাইয়ের শইলডা ভালা না, পোলা আইছে। ছোট ভাই আইছে। বইনেরা সবাই আইছে। অর দুই চাচা-চাচিওতো দেখলাম আইছে।
বাবা : হ। বড় ভাই আইতে চায় নাই, কাউলকা ডাহা যাইব ডাক্তার দেখাইতে। তার পরেও আইছে।
মা : সবাইরে দেইক্কা দেইক্কা খাওয়ান গিয়া। এখানে বইসা থাকলে হইব? বরযাত্রী চইলা আসলে তখন খাওয়া হইব না।
বাবা : আইচ্ছা যাইতাছি। এখন কয়টা বাজে? চাইরটা বাজছে নাকি?
মা : বাজতাছে। কাছায়া গেছে।
বাবা : যাইতাছি। আচ্ছা শোনো, তুমি এই টেকা জোগাইলা কেমনে?
মা : সেই কথা এখন জিগান? সারাজনম কষ্টে কাটাইলাম। মাইয়া কি বিয়া দিতে হইব না? সেই চিন্তায় নিজে কোনোদিন ঈদ, রঙ করছি? আউশ কারে কয় চক্ষেও দেখি নাই। আমি জমাইছিলাম লাখখানেক টেকা। আর বড় ভাইয়ের কাছ থিকা লইছি দুই লাখ।
বাবা : বড় ভাই শুনলাম দেনায় আছে। এমনিতেই এতগিলি টেকা দিল?
মা : দিব না ক্যান?
বাবা : সারাজনমে কিছু দেয় নাই। আসলে তার দেওনের সাইধ্যও নাই। এখন এতগিলি টেকা একমোটে কেমনে দিল?
মা : পোলার টেকা আছে না? আমার বড় ভাইরে তুমি চিন না? দুইন্নার কিপটা।
বাবা : হেই জন্যই তো চিন্তা করতাছি।
মা : হেই চিন্তা পরে করলেও চলব। যান এখন নিজেগো লোকজনরে দেইক্কা দেইক্কা খাওয়ান গিয়া। যান, তাত্তারি যান। বেলা চাইরটা বাইজ্জা গেল, এখনো আইল না।
[বাবা চলে যায়]
তৃতীয় দৃশ্য
[কনের রুমে কনে আর সখি। বাবার প্রবেশ]
বাবা : তোমরা খাইছনি? মা তুমি খাইছ?
কনে : আব্বা, আপনে কিছু খাইছেন? কয়টা দিন ধইরা খাটতাছেন। আইজ সকাল থেকাই কাজকামে ব্যস্ত। কিছু খাইয়া লন। শইল খারাপ হইব।
বাবা : আমার চিন্তা কইরো না মা, তুমি খাইয়া লও।
সখি : খালু, অরে আমি কয়েক নলা খাওয়াইছি। আপনে খাইয়া লন।
বাবা : অরে কী খাওয়াইছো, ভাত না পুলাও? ওতো বড়লোইক্কা খাওন সহ্য করতে পারে না।
সখি : কিলো বইন, তুই পুলাও খাইতে পারস না, আমারে দেখি কিছু কইল না। আমার লগে লগে খাইয়া উঠলি। পরে নি আবার যাওনের সময় বাসে উইট্টা বমি করবি।
কনে : আইজকার একটা দিন, তোর সাথে দুই নলা খাইলাম। সারাজীবনে কে কই থাকে সই, আল্লা জানে। সেই মনে কইরা খাইলাম।
সখি : খালু আমরা খাইছি, আপনে খান।
বাবা : খামুনে। মাইয়া বিদায় কইরাই খামুনে।
কনে : আব্বা, এইটা কি কিরা কাটছেন?
বাবা : কিরা কাটার কী আছে মা? মাইয়ার শুভ কাজ শেষ না হইলে কি বাপে খাইতে পারে?
কনে : অন্য মানুষের সাথে আপনের কি জোড়া? অসুইক্কা মানুষ। পেটে ব্যথা উঠলে তখন আবার আপনেরে লইয়াই টানাটানি লাগব।
বাবা : আইচ্ছা মা খামুনে। [বাবা বেরিয়ে যায়]
সখি : কিলো বইন, বেলা তো চাইরটা বাইজা গেল। জোহর নামাজের পরেই চলন আওনের কতা, এখন চাইরটা বাজে।
কনে : কি জান সই। কিছু বুঝতে পারতাছি না। চিন্তায় বাবার মুখটা কেমুন শুকায়া গেছে।
সখি : হ লো। খালুজান কেমন হইয়া গেছে।
কনে : সই, আমাগো আল্লাহ মাইয়া বানাইছে ক্যান? নিজেরা কষ্ট করি, কষ্ট পাই, সবাইরেও কষ্ট দেই। আইজকার জন্য মা না জানি কত টেকা করছে। কত বছরে সেই দেনা শোধ করব আল্লাহ জানে। এর মধ্যে বাবা যুদি সুস্থ হয় তাইলে কামাই করতে পারব, নাইলে তো বিরাট ফ্যাসাদে পড়ব।
সখি : হ লো বইন। সংসারে এক মাইয়ার সুখের লাইগা কত জনরে যে অশান্তির আগুনে পুড়তে হয়! পোলা হইলেই ভালা। পরের বাড়ি থিকা লাখটেকা পাওয়া যায়। জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তোর ছোট ভাইটারে যে দেখছি না।
কনে : অরে কি আর আইজ ঘরে পাবি? এমনিতেই ঘরে থাকে না, আইজ বোনের বিয়া না? বন্ধু-বান্ধবের অভাব আছে? কোনোরকমে স্কুল থেকে আসে, তারপরেই সারাদিন খেলা আর খেলা। যাক, এই পোলায়ই আমার বাপ-মায়রে যদি ভাতকাপড় দেয়।
সখি : যাক, পোলাপান মানুষ, খেলুক। বইনের বিয়া তো সারাজনম খাইব না, একদিনই তো। ফুর্তি ফার্তি করুক। আরেট্টু বড় হইলে বুঝব সংসার কারে কয়।
কনে : হ।
সখি : বইন, তুই কি গত মাসের বেতন পাইছিলি?
কনে : হ। সুপারভাইজারে আটকায়া দিতে চাইছে। কয় লোক দিয়া যাও। আমি ম্যানেজার স্যারের কাছে বলছি, স্যার আমার বিয়া ঠিক হইয়া গেছে, এখন তো আর আমি কাজ করতে পারুম না। তখন স্যার হিসাব করে বেতন দিয়া দিছে।
সখি : সামনে নাকি মেইল ফ্যাকটারি সব বন্ধ হইয়া যাইব?
কনে : শুনতাছি তো কত বছর ধইরা। এই বন্ধ সেই বন্ধ। আবার তো মালিকরা দিনে দিনে মেশিন কিন্না মেইল বড় করতাছে।
সখি : তুই কত বছর কাজ করলি?
কনে : সেই হিসাব আছে? ছোটবেলা স্কুল থিকা ফিরায়া সেই যে মেইলে দিল মা, গত মাস পর্যন্ত তো কাজই করলাম। চিন্তা কর, পনের বছর হইলে এর মধ্যে পাঁচ বছরই নাইট ডিউটি করছি। জীবনের চার ভাগের একভাগ সময় রাইত জাইগাই কাটাইলাম।
সখি : যাক, এখন রাইত জাইগা আরামে থাকবি।
কনে : [হেসে] যাহ, শয়তান।
[দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকায়]
সখি : দুলাভাই কি জানে তোর কাজ করার কথা?
কনে : না। আরে শোন, হেরা কিন্তু মাইয়াগো সুতার মেইলে কাজ করা পছন্দ করে না। তুই কিন্তু ভুলেও হেগো সামনে এই কথা তুলিস না।
সুখি : ক্যান, কেউ কিছু কইছে?
কনে : না এখন পর্যন্ত জানে না।
সখি : কোনোদিন কি জানব না?
কনে : জানতেও পারে। তখন বলমু বাড়িঘর নদীতে ভাঙার পরে সংসারের টানে কিছুদিন কাজ করতে হইছে। করছি।
সখি : দুনিয়াটা কত ঝামেলার না? কত সত্য কথা এখানে লুকাইয়া রাখতে হয়। আমি বুঝি না কাজ করলে সমস্যাটা কী?
কনে : শোন পয়সাটা সবাই চায়। কিন্তু কাজ করতে চায় না, করাইতেও চায় না বাঙালি। মেইলে কাজ করলে সবাই দোষ ধরে না, কিন্তু নাইট ডিউটি করলে দোষের মনে করে।
সখি : নাইট ডিউটি করলেই খারাপ? দেশের আর কেউ নাইট ডিউটি করে না?
কনে : করে, অনেকেই করে। পুরুষেরা তো করেই। মহিলারাও করে। ঢাকায় গার্মেন্সে অহরহ করতাছে। হাসপাতালে নার্সেরা সারা রাত ডিউটি করে। আমরা তো আটঘণ্টা ডিউটি করছি, অনেক জায়গায় বারো ঘণ্টা করেও ডিউটি করে। রাত আটটা থেকে সকাল আটটা।
সখি : টিভিতে যে সারা রাত অনুষ্ঠান চলে সেখানেও নাকি মহিলারা নাইট ডিউটি করে!
কনে : হ। আমিও শুনছি। মোবাইল কোম্পানিতেও নাকি মেয়েরা নাইট ডিউটি করে। তয় হেরা শিক্ষিত লোক। বড় লোক। অফিসের গাড়ি দিয়া যায়, গাড়ি দিয়াই আসে। হেগো কথা আলাদা।
সখি : শোন আমি শুনছি এইসব শিক্ষিত বড়লোকের মাইরাই বেশি খানকি হয়।
কনে : আস্তে ক। কে জানি আসতাছে। তয় হেগো বিচার ভিন্ন। ভিন্ন রকমের চিন্তা তাদের।
সখি : [ঘড়ির দিকে তাকায়] কিলো বইন, এখনো তো খবর নাই।
কনে : কি জানি লো সই। ভিত্রে ভিত্রে আমার ভয় লাগতাছে। তুই বাইরে যা, একটু খোঁজ খবর নে। কারা কি জানি বলতাছে!
[সখি বেরিয়ে যায়। ]
চতুর্থ দৃশ্য
[ কনের কক্ষে কনে আর মা। মা ঘন ঘন ঘড়ির দিকে তাকায়।]
মা : বেলা তো পইড়া আইল। এখনো চলনের খবর নাই!
কনে : কী হইছে গো মা?
মা : কই, কী হইছে?
কনে : ঘরের পিছনে বাইরে কারা জানি কী সব বলাবলি করতাছে।
মা : কই, কী সব বলাবলি করে? বিয়াবাড়িতে অনেক লোক একত্র হয়, তাগো পেটের কথা সব পরান ভইরা পারে। তুই কী শুনছত?
কনে : মাগো আমার ভয় লাগতাছে। আমার যুদি কিছু হয় মা, তুমি কি আমারে মাফ করবা?
কনে : তুই কি সব আজেবাজে কথা কস? কী হইব, কিয়ের মাফ করমু?
কনে : মা, তুমি কিন্তু আব্বারে সামলাইয়া রাইখো।
মা : তুই আজাইরা চিন্তা করিস না। কিছু হইব না।
কনে : মা তুমি বসো। তোমার সাথে আজ কথা বলারও সুযোগ হইল না। আব্বারে তুমি কিছু খাওয়াও। অসুইক্কা মানুষ। শরীল খারাপ হইলে তারে লইয়াই টানাটানি লাগব।
মা : আমি তো খাইতে পাঠাইছি। খাইছে কিনা কে জানে? তোর ভাইডায় আজ কই গিয়া রইছে। খাইছে কিনা কে জানে।
কনে : আচ্ছা মা, একটা কথা। তুমি বড় মামার কাছ থিকা টাকা আনছো যে, কোনো শর্তে নাকি?
মা : সেই কথা তোর শোনার দরকার নাই।
কনে : না মা। দরকার আছে।
মা : পরে জানতে পারবি না?
কনে : এখন বলতে তোমার সমস্যা আছে?
মা : তোর বাপে যেন না জানে।
কনে : ঠিক আছে আব্বায় জানতে পারব না। আমি জানাইলাম না। কিন্তু কোনোদিনও কি জানতে পারব না?
মা : পরে জানলে সমস্যা নাই। এখন আগের কাজ আগে হউক।
কনে : মা তুমি সত্য করে কও তো, আমাগো বাড়ি বেইচ্চা দিছো?
মা : তুই চুপ থাক তো।
কনে : না মা। আমার ভালা লাগতাছে না। কেমন টেনশন লাগতাছে।
মা : বরযাত্রীর টেনশনের লগে ঐ বিষয়ের সম্পর্ক কী? তুই শান্ত হইয়া ব।
কনে : সম্পর্ক আছে মা। জগতের সব ঘটনার সাথেই সব ঘটনার সম্পর্ক আছে। সব কিছু আমি জানি না। সব কিছু তুমিও জানো না। জগতের সব কিছু যে কোথায় মিলে আছে তা জ্ঞানীগুণীরাও বলতে পারে না।
মা : হ। আমি এ ছাড়া আর কী করমু? তোর বাপের শরীল ভালা না। এই কাজ আছে এই আজাইরা। বাড়িঘর গাঙে নিছে। আমার বাপে মরনের আগে দুই শতাংশ জায়গা লেইখা দিছিল। যে বাড়িতে গিয়া আমরা থাকি। সেইটা আমাগো কিনা সম্পত্তি না। আমার বাপের দেওয়া। তোর বড় মামায় জায়গাটা রাখতে চাইছে। অনেক বছর ধইরাই বলতে ছিল। শেষ পর্যন্ত কী আর করমু। তোর সুখের দিকে চাইয়া করতে হইছে।
কনে : এইটা তুমি কী করছো মা? তোমার সন্তান কি আমি একলা? ছোট ভাইটারে কী দিবা? ও কি সারাজনম পরের বাড়িতে ভাড়াই থাকব? বড় হইয়া যখন বুঝব আমার কারণে ওর পায়ের তলার মাটি সইরা গেছে আমারে কোনোদিন আপন মনে করব? ডাক-খোঁজ নিব? তুমি এইটা কী করলা মা?
মা : তোর জন্যই তো করছি।
কনে : আমার জন্য না হয় অন্য জায়গায় সম্বন্ধ দেখতা? আমি কি বলছি যে এখানেই আমারে বিয়া দিতে হইব? দুই লাখ টেকা নগদ, এক ভরি স্বর্ণ দিতেই হইব? বিদেশি পোলা বিচরাইছো, বিদেশ থিকা যে কামাই কইরা আসে, সেয় আবার পরের বাড়িরটার আশায় থাকে? স্বাধীন ব্যবসা বিচরাইছো! যে পুরুষ পেশায় স্বাধীন থাকতে চায় সেয় কি আবার পরের বাড়ির পুঞ্জি চায়? এইটা কী করলা মা?
মা : এইসব কথা এখন কইস না। তোর জামাই বেজার হইব। ফোনে যখন বিয়া হয়, তখন এই সব কথায় রাজি হওনের পরেই হইছে। এখন এইসব কথা কইস না। তোর সংসার যেন আল্লাহ সুখে রাখে।
কনে : টেলিফোনের বিয়ার বিশ্বাস আছে? সারা জনম এক বিছানায় ঘুমায়া মানুষ চিনন যায় না, মানুষ কি টেলিফোনে চিনন যায়?
মা : কতা কইস না তো। তুই চুপ থাক। আমার কথা একটাই, তোর ভালোর জন্যই করছি।
কনে : তুমি আমার ভালোর জন্য করছো, তোমার পোলার ভালোর জন্য কী করলা? আমারে তো শত্রু বানায়া দিলা চিরতরে।
মা : ওর জন্য আল্লাহ আছে।
কনে : আল্লাহ সবার জন্যই আছে। তুমি তো আল্লার নির্দেশ অমান্য কইরা এখন আল্লাহর দোহাই দিতাছো। পরের পোলারে আপন করতে গিয়া পেটের পোলারে পর কইরা দিলা!
মা : জামাই যদি তোরে সুখে রাখতে পারে, আমাগো দিনকালও ফিরতে পারে।
[বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। দ্রুত সখির প্রবেশ। কথা বলতে গিয়ে হাঁপাচ্ছে।]
সখি : খালা, জলদি আসেন। খালু অজ্ঞান হাইয়া পইড়া গেছে।
মা ও কনে [একত্রে] : কী হইছে?
সখি : কার কাছে জানি কী শুনছে। এখন কথা বলতে পারে না। কতক্ষণ গোঙাইছে। ঘাম দিয়া অজ্ঞান হইয়া গেছে।
কনে : আব্বা!
[চিৎকার দিয়ে বাইরে যাবার চেষ্টা করে। সখি তাকে ধরে রাখে। বিছানায় বসায়। মা দ্রুত বেরিয়ে যায়।]
পঞ্চম দৃশ্য
[বাইরে কামরাঙা গাছের নিচে চেয়ার সরিয়ে মাটিতে শোয়ানো হয়েছে বাবাকে। মাথায় পানি দেওয়া হচ্ছে। মা মাথায় প্লাস্টিকের মগ দিয়ে পানি ঢালছে। ]
মা : পানি তো দিতাছি জ্ঞান তো ফিরতাছে না। ডাক্তারের কাছে নেওন দরকার।
অচেনা যুবক-১ : আমরা দেখি আপনে শান্ত হন।
মা : দেখ বাবা, একটা রিকশা ডাইকা আনতে পারোনি। সদর হাসপাতালে নেওনের ব্যবস্থা করন দরকার।
অচেনা যুবক-২ : আমি দেখি আপনে সরেন।
[যুবকেরা মাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরা মাথায় পানি ঢালে। গামছা দিয়ে মাথা মোছে। ধরাধরি করে বাইরে নিয়ে যায়। মা অসহায় বিমূঢ় দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ বসে পড়ে। ]
ষষ্ঠ দৃশ্য
[কনের কক্ষে কনে আর সখি। কনে উদ্বিগ্ন।]
কনে : আব্বার কী হইছে?
সখি : মনে হয় সারাদিন না খাইয়া আছে বইলা অজ্ঞান হইয়া গেছে।
কনে : না, কোনো কিছু শোনার পরে ব্লাডপ্রেশার বাইড়া গেছে।
সখি : হ। কী জানি শোনছে।
কনে : কী শোনছে?
সখি : বরযাত্রীর বাস নাকি এক্সিডেন্ট হইছে।
কনে : আমিও এমন ধারণা করতেছি। আমার মনে হয় আমার মঙ্গলবারে জন্ম, মঙ্গলবারেই বিয়ার দিন ঠিক করছে না? অলক্ষ্মী আছে সারা জীবনই। আমার লাইগা সবার কপালে দুর্দশা আছে গো সই। আমি এক অভাগী। অলক্ষ্মী।
সখি : বাইরে কী জানি বলাবলি হইতাছে শুইনা আসি।
[সখি বাইরে বেরিয়ে যায়। বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। কনে ঘরে অস্থিরভাবে হাঁটে। বিয়ের গরিবি সাজ কী করবে ভেবে পায় না। একবার খুলে ফেলতে চায়। আবার দ্বিধাগস্ত হয়ে রেখে দেয়। সখি দৌড়ে আসে।]
সখি : সর্বনাশ হইয়া গেছে বইন, চলনের বাস এক্সিডেন্ট হইছে।
কনে : জানি রে সই জানি। [কান্নাজড়িত কণ্ঠ]
সখি : কেমনে জানলি? এখানে কে আইসা বইলা গেছে?
কনে : কেউ আসে নাই, কেউ বলে নাই। আমার মন বলতেছে। আমার জন্য নাকফুল নিয়া মানুষটা আর আসব নারে সই। বিয়ার আগেই আমি বিধবা হইয়া গেলাম। [কান্না]
সখি : দূর। কী অলক্ষ্মীর কথা কস! উনি বাঁইচা আছে। যার বিয়া সবাই কি তারে আগে বাঁচানের চেষ্টা করব না! কাঁদিস না বইন! সবার কিছু হইলেও তোর বরের কিছু হইব না। তুই কি তার জন্য নামাজ পইড়া দোয়া করস নাই!
[কনে সখিকে জড়িয়ে ধরে।]
কনে : আমার জন্য পুরা সংসারটা গেল রে। ছোটবেলায় গাঙের ভাঙন দেখছি। ঘরদুয়ার গাঙে, ভাংছে কিন্তু সংসার ভাংতে পারে নাই। আইজ আমার কারণে পুরা সংসারই ভাংছে রে!
সখি : কান্দিস না সই। কান্দিস না।
কনে : কান্দন ছাড়া আমার আর কী করার আছে? আমার বিয়ার আয়োজন করতে গিয়া মা আমার ভাইটারে নিঃস্ব করছে। বাবার ইস্টোক করছে না হার্ট এটাক করছে। সব শেষ রে সব শেষ!
সখি : তুই শুধু শুধু নিজের উপরে দোষ টাইনা নিতাছোত।
কনে : তুই বাইরে কী কথা হইতাছে শোন।
[কনে এবং সখি দুজনেই উৎকর্ণ হয়। বাইরে জনতার কোলা হল শোনা যাচ্ছে।]
জনতা : ফেরি থেকে বাস পানিতে পড়ে গেছে।
জনতা : চার-পাঁচ জনরে জ্যাতা উঠাইতে পারছে।
জনতা : জামাইরে বাইর করতে পারে নাই।
জনতা : অনেকগুলা বাচ্চা পোলাপান মারা গেছে।
জনতা : জামাইর ঘরের কেউ মনে হয় জীবিত নাই। বাপের আর বড় ভাইয়ের লাশ পাইছে। বোন-ভাইগ্না-ভাগ্নি সবাই মারা গেছে।
জনতা : জামাইর বাপের লাশ ফেরিঘাট থেকে একটু দূরে পাইছে। ফায়ার বিগ্রেডের লোকেরা অক্সিজেন লাগায়া গাঙে নামছে। বাস খুঁইজা পাইতাছে না। মনে হয় ¯্রােতে দূরে লইয়া গেছে।
জনতা : আরে না, ¯্রােতে এমন ভরা বাসটা কই নিবো? বালুতে ঢাইকা গেছে মনে হয়।
সখি : হায় হায় বইন! এখন কী হইব?
কনে : কী আর হইব! হইতে আর বাকি রইছে কী? আব্বার খবর কেউ আইনা দিতে পারবি? মায় কই? মা গো মা, তুমি কই? আমার কাছে আসো।
[মায়ের প্রবেশ। মা কনেকে জড়িয়ে ধরে রাখেন। মুখে কোনো কথা নাই। স্থাণু হয়ে গেছেন।]
সখি : খালা আপনে বসেন। খালুরে হাসপাতালে নিছে কে?
কনে : মাগো, চলন ফিরা যাওয়ার পথে যুদি ডুবত, আমার মতো এই অলক্ষ্মীরে লগে লইয়া যাইত। আল্লাহ গো তুমি এই পাপীরে না নিয়া ঐ ভালা মানুষগিলিরে ক্যান নিলা?
[কাঁদতে কাঁদতে কনে ঢলে পড়ে। সখি তাকে শুইয়ে দেয় বিছানায়। মা বিছানার কোনায় স্তব্ধ কসে থাকেন।]
সপ্তম দৃশ্য
[সেই ঘর। সব কিছু আছে। কেমন পুরনো পুরো লাগে। শুধু মিটসেফের ওপরে টিভিসেট নাই। মা বিছানায় শোয়া। প্যারালাইজড। কনে পাশে বসা। চেহারা মলিন, শীর্ণ। সবার পরনের পোশাক মলিন। দুয়ারে দাঁড়ানো ছেলে।]
ছেলে : মা তুমি কি আমারে আর ইস্কুলে যাইতে দিবা না? নাইট ডিউটি করতে আমার ভালা লাগে না।
মা : কী করবি বাজান? ঘরভাড়া দিয়া, সংসার চালায়া রাখা কত কঠিন। আল্লাহ দিলে আমি একটু ভালা হইলে মেইলে কাজে লাইগা যামু। তোর আফার একজনের বেতনে তো সংসার চলব না বাজান কী করবি?
[মা কেঁদে ওঠেন]
কনে : মা, তুমি কাইন্দো না তো! কানলে কী হইব! তুমি সুস্থ হইলে কাজ কইরো। আর আমি এখন থিকা প্রতিদিন লাগে ওভারটাইম করুম।
ছেলে : আফা তুমি নাইট ডিউটি বেশি কইরো না। তাইলে আর বিয়া হইব না। ঠিক আছে আমিই কাজ করমু।
কনে : ভাই শোন, আমি যদি বেশি বেতন তুলতে পারি, তোরে আর কাজ করতে দিমু না। আমারে ম্যানেজার স্যারে বলছে, কম্পানির দরকার মতো কাজ বেশি কইরা করতে পারলে বেতন বাড়ায়া দিব। ওভারটাইমও পামু। তুই কয়েকটা দিন একটু কষ্ট কর।
ছেলে : কিন্তু আমার নাইট ডিউটি ভালো লাগে না। খালি ঘুম পায়। সুপারভাইজারে খালি ধমকায়। ওস্তাদে মারে। আব্বায় থাকলে রাস্তার পারে বইসা দুইজনে পিঠা বেচতাম।
মা : তোর আব্বায় থাকলে ফেরিঘাটে ডিম বেচতে পারত, পিঠাও বেচতে পারত। তুই একলা তো পারবি না।
কনে : কষ্ট কর ভাই। আমরা কষ্ট না করলে জগত অচল হইয়া যাইব। জগৎ যখন অচল হইয়া যায় আমরাই তো মেহনত কইরা চালু রাখি।
ছেলে : আজকে থিকা বিকালের ডিউটি। বিকালে খেলতে পারি না দশদিন। ভালা লাগে না। জানালা দিয়া বাইরে চাইলে খালি কান্দন আহে।
কনে : শোন বেতন পাইলে নিজে খরচ করতে পারবি যখন, তখন আর খারাপ লাগব না। দেখবি তখন খালি বেশি বেশি কাজ করতে ইচ্ছা করব।
ছেলে : সত্যি? আমি কিন্তু প্রথম মাসের বেতনের টেকা দিয়া জিনসের একটা মোবাইল আর একটা জ্যাকেট কিনমু। শীত আইতাছে সামনে। ভালা একটা জ্যাকেট কিনমু।
[ছেলে বেরিয়ে যায়।]
মা : তোরে একটা কতা কইতে চাই।
কনে : [গম্ভীর হয়ে] কী মা?
মা : তোর বড় মামা একটা প্রস্তাবের কথা বলছিল। বেটার আগের ঘরের বউয়ের সন্তান হয় না, তাই আবার একটা ভালা মাইয়া চাইছিল।
কনে : বাজে কথা রাখো মা। দেনা লইয়া তুমি কবরে যাইতাছো, সেই চিন্তা করো।
মা : সেই চিন্তাটাই তো দূর হইত। কিছু দেওন থোওন লাগব না। উল্টা তোরে সাজাইয়া নিতে চায়।
কনে : মা, আমার মতো অভাগী আর অলক্ষ্মী যেই ঘরে যামু, সেই ঘরেই আগুন লাগব। বাপ হারাইলাম। ভাইরে চিরশত্রু বানাইলাম। এহন চারদিকে মাইনষে আমার নামে কী কয় শুনছ? আমার মতো পাপীরে বিয়া করনে লোকটার বংশ নির্বংশ হইয়া গেছে। একত্রিশ জন মানুষ বরযাত্রীর বাস ডুইবা মারা গেল। এতগুলা মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিল, শুধু আমার কারণে মা, শুধুই আমার কপালের দোষে! তুমি আন্দাজ করতে পারো আমার পাপের বোঝা কত বড়! সারাদেশের মানুষে জানে। পেপারের সাংবাদিকরা যখন আমার এই পোড়ামুখের ছবি তোলছে তখন আমার ভালা লাগে! সারা পৃথিবীর মাইনষে জানে। টিভিতে কয়েকদিন ধইরা দেখাইল মা! দেশ বিদেশ থিকা কত রাজা-বাশ্শা-পেসিডেনরা শোক জানাইছে। আমার দুঃখ কি দূর হইছে! এই ডাইনীমুখ এখান সবাই চিনে।
মা : সবাই কয় দেইখা তুইও কইবি! দুনিয়াতে কত এক্সিডেন্টে হইতাছে, কত মানুষ মরতাছে। সব কি একজনের পাপে?
কনে : তুমি বিদেশি পার্টি বিচরাইছো, বড়লোক বিচরাইছো। কী মনে কইরা তুমি পেটের পোলারে ঠকাইয়া জামাইর উন্নতি চাইছো। যুদি গাঙের এইপারের কোনো গরিবের লগে বিয়া ঠিক করতা, ভালা থাকতাম। রিশকা দিয়াও যদি বরযাত্রী আইত, এতগিলি মানুষ মরত না। হাশরের ময়দানে আমি খুনের মামলার আসামি হইয়া ওঠতাম না। একজন মেইলের শ্রমিকের লগেও যদি বিয়া দিতা, দুইজনে কাজ করতাম, দিন শেষে সুখে ঘুমাইতাম। এখন তুমি আমার ঘুম কাইড়া নিয়া গেছো। মনের শান্তি হুদা কইরা ফালাইছো।
মা : তাই বইলা তুই কি সারাজনম এমনেই কাটাবি? ব্যবস্থা একটা করন লাগব না? তোর বাপে নাই, আমি মইরা গেলে তখন তোর কী হইব? একটা ব্যবস্থা কইরানি আমি চউখ বুজতে পারি।
কনে : বাজে পেঁচাল রাখো। এখন তুমি অষুধ খাইয়া ঘুমাও। আমি গোসল করতে গেলাম। আজ থেকে আমারও বিকালের ডিউটি। রাতে নাইটও করতে হইতে পারে। ফিরতে ফিরতে কাল সকালে।
মা : দেখরে মা। জীবনের ওপর রাগ করিস না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চিন্তা কইরা দেখিস।
[কনে নিরুত্তর বেরিয়ে যায়।]
সমাপ্ত