পাঠকের পাতার বই ব্যবচ্ছেদ কর্মসূচিতে এবার আলোচনা করা হয়েছে হাসনাত আবদুল হাই রচিত ‘নভেরা’ উপন্যাসটি। গত ১২ মে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, ভাস্কর নভেরা আহমেদের জীবননির্ভর এই উপন্যাসটি ১৯৯৪ সালে বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত। এরপর থেকেই ইতিহাসের অন্ধকার থেকে আলোতে বেরিয়ে আসেন এই গুণী ভাস্কর-চিত্রকর। ১৯৯৫ সালে উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটি বের হওয়ার পরে এর পক্ষে-বিপক্ষে দুধরণের প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়। অনেকের মতে নভেরা’র জীবনকে লেখক অতি নাটকীয় করে তুলেছেন।
পাঠকের পাতা’র বই ব্যবচ্ছেদে এবারের মূল আলোচক ছিলেন আবদুল্লাহ জাহিদ। অন্যান্যের মধ্যে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন সোমা ফাহমিদা জেবিন, মুক্তি জহির, ফাহিম রেজা নূর, নাসরীন চৌধুরী। এছাড়া আলোচনা করেন কবীর আনোয়ার, কাজী জহিরুল ইসলাম, ওবায়েদুল্লাহ মামুন, সৈয়দ ফজলুর রহমান, স্বীকৃতি বড়ুয়া, ইসমাইল হোসেন, শাহেদ রেজা নূর প্রমুখ।
আবদুল্লাহ জাহিদ তার লিখিত বক্তব্যে উপন্যাসের পাশাপাশি নভেরার ব্যক্তি জীবনকেও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই গ্রন্থটি লিখে হাসনাত আবদুল হাই ভাস্কর নভেরাকেই শুধু আলোতে নিয়ে আসেননি, বাঙালি নারীদের সামনে একজন মডেলকেও উপস্থাপন করেছেন; যা মেয়েদের এগিয়ে চলাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এখনো করছে।
সোমা ফাহমিদা জেবিন আক্ষেপ করে বলেন, পুরুষশাসিত সমাজ চিরকালই মেয়েদের কোণঠাসা করে রেখেছে, সেইরকম একটি সমাজে নভেরা স্ফুলিঙ্গের মতো বেরিয়ে এসেছেন সব সংস্কারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। নভেরার জীবনকে ‘নভেরা’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করে বাংলাদেশের নারী সমাজকে এগিয়ে যাওয়ারই পথ দেখিয়েছেন লেখক হাসনাত আবদুল হাই। তিনি হাসনাত আবদুল হাইয়ের আধুনিক জীবন যাপনের নানান দিকও তুলে ধরেন।
মুক্তি জহির বলেন, নভেরা তার নিজের জীবনযাপন করেছেন কোনো শৃঙ্খল না মেনে। তিনি অন্যের কাছে অনুকরণীয় হবেন কি হবেন না, এতে সমাজের কোনো উপকার হচ্ছে কি হচ্ছে না, এসব তার ধর্তব্যের মধ্যে ছিল না। তিনি যা নিজের জন্য ভালো মনে করেছেন, তা-ই করেছেন এবং নিজের জীবনকে এভাবে যাপন করে তিনি প্রকৃতপক্ষে বাঙালি নারী সমাজকে ১০০ বছর এগিয়ে দিয়েছেন। ‘নভেরা’ উপন্যাস পড়ে এটাই আমার মনে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নভেরা একটি অনবদ্য উপন্যাস এবং বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
ওবায়েদুল্লাহ মামুন নভেরা উপন্যাস, না জীবনী; এই বিতর্ক তুলে আলোচনাটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক কবীর আনোয়ার বলেন, নভেরা উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন ফর্মেট হলেও এ ধরনের ফর্মেটে অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, এই উপন্যাসে নভেরার জীবনকে মলাটবন্দি করে লেখক তুলে দিয়েছেন কোটি বাঙালির হাতে। সন তারিখ, স্থান ও অধিকাংশ পার্শ্বচরিত্র ঠিক রেখে তিনি কিছু গল্প নির্মাণ করেছেন নভেরার চারিত্র্যিক বৈশিষ্টকে ফুটিয়ে তোলার জন্য। এটি অবশ্যই একটি উপন্যাস ও উপন্যাসে গল্প তৈরির স্বাধীনতা লেখকের আছে। তবে এই উপন্যাসে ডকুমেন্টেশনের প্রচুর কাজ থাকায় এটিকে একটি সার্থক ডকুফিকশন বলা যেতে পারে। যদি নভেরা নামের কোনো মানুষের অস্তিত্ব না থাকত, তাহলে এটি আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হয়ে উঠতো। আহমাদ মাযহার উপস্থিত থাকতে না পারায় লিখিত বক্তব্য ইমেইলে প্রেরণ করেন, সেটি পাঠ করে শোনান শাহেদ রেজা নূর।
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান নাজনীন মামুন ও রাজিয়া নাজমী। ছড়াকার শাহ আলম দুলাল স্বরচিত ছড়া পাঠ করেন। শিল্পী রাগীব আহসান আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় নভেরার ভাস্কর্যশিল্পের প্রশংসা করেন।
বই ব্যবচ্ছেদ-৫-এর জন্য আয়োজকেরা নির্বাচন করেছেন জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’। ১৬ জুন দুপুর আড়াইটায় কুইন্স লাইব্রেরি হলিসে এই গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করবে পাঠকের পাতা।
উল্লেখ্য, পাঠকের পাতা কুইন্স লাইব্রেরি হলিসের বাংলা বুক ক্লাব।