পণ্ডিতেরা সমগ্র জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলেছেন, ‘হাসিলে কাঁদিতে হয়’। আমরা এতদিন এ কথার ভাব সম্প্রসারণ করতাম কিছুটা বুঝে, কিছুটা মনে যা আসে, সেই বুঝে। গতকাল পর্যন্ত যারা ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের আর এই বাক্যটির ভাব সম্প্রসারণ করতে বই পুস্তক হাতাতে হবে না। পাতার পর পাতা রচনা লিখতে পারবে ওরা এ বিষয়ে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক বেহায়া হাসি দিয়ে প্রাচীন বাক্যটির যথার্থ ভাব সম্প্রসারণ করেছেন।
আমাদের কোমলমতি শিশুরা জেনেছে, হাসি জীবনের সম্পদ। ভালোভাবে, সুস্থভাবে বাঁচতে হাসতে জানতে হয়। পাশাপাশি তারা এটাও জানলো, সবসময় হাসতে হয় না। অন্যের বিপদে, শোকে-তাপে হাসি উল্টোপথ্য। নৌপরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান যেটা ভুলে গিয়েছিলেন। তার একটা হাসি গোটা জাতিকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কর্ণধার, যাদের পরীক্ষা সমাগত, তারা বই-খাতা ফেলে এসে দাঁড়িয়েছে রাজপথে। রাজধানীর স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা গেছে মিডিয়ার বদৌলতে। কিন্তু এর বাইরে দূর গাঁয়ের পাহাড় ও সমতলের লাখো লাখো শিশু প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, মানববন্ধনসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।
যে শিশুগুলো সারাদিন রাজপথে ছিল বা আছে, তারা কি একা একাই আছে? ওদের সঙ্গে আছে ওদের বাবা কিংবা মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা। বাবা-মা না চাইলে কি এই শিশুরা মিছিলে বা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে থাকতে পারতো? শিশুরা যা চেয়েছে, তা কি বড়দেরও চাওয়া নয়? যে শিশুগুলোর আইনের ‘অ’-ও জানার কথা নয়, তারা কিনা আইনরক্ষকদের প্রশ্ন করতে শুরু করল, বৈধতার! কেন?
রাষ্ট্রকে এখন এইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। এটা কোনও দলের বিষয় নয়। রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ মালিকরা নিজেরা রাস্তায় নেমে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করে, নিজ হাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেরা রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কেমন রাষ্ট্র চায়, কেমন নগর ও প্রশাসন চায়। রাষ্ট্রকে এখন সেভাবেই নিজেকে ঢেলে সাজাতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে যে হাজার হাজার পোস্টার-ফেস্টুন ছিল সেগুলোই তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের রূপরেখা। বাঙালিশ্রেষ্ঠ, মহান নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলার ছয়দফা ও এগারো দফার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দফাগুলো যোগ করতে হবে। রাষ্ট্র যত তাড়াতাড়ি এটা উপলব্ধি করবে ও বাস্তবায়নে হাত দেবে, তত তাড়াতাড়িই মঙ্গল আসবে। চির সংগ্রামী বাংলার জয় হোক।