জীবনের শেষবেলায় এসে নূরজাহান বোস লিখেছেন তার আত্মজীবনীগ্রন্থ ‘আগুনমুখার মেয়ে’। দক্ষিণ বঙ্গের এক নদীর নাম আগুনমুখা, সেই নদীর এক চরগ্রাম কাটাখালি। কাটাখালির মাটি থেকে উঠে আসা নূরজাহান বোস ‘আগুন মুখার মেয়ে’ লিখে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছেন। কী আছে এই গ্রন্থে?
লেখক পূরবী বসু লিখেছেন, ‘এই গ্রন্থ শুধু একটি চরবাসী নারীর জীবনসংগ্রাম ও তার উত্তরণে পরিশেষে জীবনযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার কাহিনীই নয়, এই বই এই জনপদের উত্থানপতনের রাজনীতি, সাতচল্লিশের দেশভাগ, দেশত্যাগ বা উৎখাতের পর উদ্বাস্তুদের দুর্ভোগ, সমাজ পরিবর্তন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ভৌগলিক আবেষ্টনী বদলানোর চমৎকার প্রতিচ্ছবি। সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে ও পরে হিন্দুমুসলমান সম্পর্ক, অবিশ্বাস, এই দুই ধর্মের লোকের ভেতর সামান্য কারণে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি, আবার কোথাও কোথাও চরম সখ্য, ধর্মীয় দাঙ্গা, সংসারের ভেতরে এবং বাইরে নারীর অবস্থান নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। নূরজাহানের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা গ্রন্থের রন্ধে রন্ধে বিবৃত।’
অধ্যাপক তপন রায় চৌধুরী দেশ পত্রিকায় নূরজাহান বোসের ‘আগুনমুখার মেয়ে’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নূরজাহানের জন্মস্থানকে বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘আগুনমুখা বরিশালের একটি নদীর নাম। গাঙ্গেয় বদ্বীপ যেখানে সমুদ্রকে প্রায় স্পর্শ করেছে , বরিশাল জেলার সেই অঞ্চল বহু নদনদী আর পলিমাটির তৈরি চরে আকীর্ণ। আর-ও ছ’টি নদীর সঙ্গে মিলে আগুনমুখার রূপ ভয়াল, তরঙ্গবহুল। যুগে যুগে সর্বধ্বংসী নিষ্করুণ এই নদী অত্যাচারিতা মেয়েদের কোলে ঠাঁই দিয়েছে, তাঁদের সর্বদুঃখের শেষ আশ্রয় হয়ে। নূরজাহান এই আগুনমুখার চরের এক গ্রাম কাঁটাখালির মেয়ে।’
হলিস লাইব্রেরির বাংলা বুক ক্লাব ‘পাঠকের পাতা’ নূরজাহান বোসের ‘আগুনমুখার মেয়ে’ গ্রন্থটি নির্বাচন করেছে জুলাই মাসের বই ব্যবচ্ছেদ কর্মসূচির জন্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে থাকছে, এবার লেখক নিজেও উপস্থিত থাকবেন। এবারের বই ব্যবচ্ছেদের মূল আলোচক থাকবেন মনজুর আহমদ, লেখক পূরবী বসু সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও গ্রন্থটির ওপর একটি লিখিত আলোচনা পাঠিয়েছেন, যেটি অনুষ্ঠানে পাঠ করা হবে। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করবেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, গবেষক ওবায়েদুল্লাহ মামুন, লেখক আবদুল্লাহ জাহিদ প্রমুখ।