বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-র পর এবার পাঠকের পাতা নির্বাচন করেছে কাজী জহিরুল ইসলামের ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ ‘শেকড়ের খোঁজ’। আগামী ২১ এপ্রিল শনিবার গ্রন্থটি নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কুইন্স লাইব্রেরি। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. বিলকিস রহমান দোলা। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করবেন ড. মাহবুব হাসান, ওবায়েদুল্লাহ মামুন, ফরহাদ ইসলাম প্রমুখ।
এটি বাংলা নববর্ষের মাস, তাই ক্লাবের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর বারোটায়, প্রথম দুই ঘণ্টা ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বরণ উপলক্ষে থাকবে নানান স্বাদের পিঠার সমাহার, বৈশাখী গান ও কবিতা পাঠ। সঙ্গীতে অংশ নেবেন শারমীন মোহসীন, সূতপা মণ্ডল, ভায়লা সালিনা লিজা, মুক্তি জহির, কনিকা, রুমা দিলরুবা প্রমূখ। কবিতা আবৃত্তি করবেন শ্যামা শ্যামলিপি, নজরুল কবীর, মোহাম্মদ মোহসীন ও রাজিয়া নাজমী।
শেকড়ের খোঁজ গ্রন্থটি রচিত হয়েছে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে এর বিকাশ, বাংলার শাসন ব্যবস্থার ইতিহাস, মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর জীবন, ৫২র ভাষা আন্দোলন এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধসহ সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার ধারাবাহিক ইতিহাস প্রভৃতি ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে। গ্রন্থটির ফ্ল্যাপ বলা হয়েছে, ‘আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা। এই ভাষাকে মহিমান্বিত করেছে একুশ। সংস্কৃত মাগধী প্রাকৃত হয়ে, চর্যাপদের লুইপা কাহ্নপা’র হাত ধরে, চন্ডীদাসের মস্তিস্কের কোষে কোষে বসত করে, বঙ্কিম, মাইকেল হয়ে রবীন্দ্রনাথের স্পর্শে যে ভাষা এনেছে নোবেলের সম্মান, কতটুকু আমি জানি তার শেকড়ের খোঁজ? বাংলা নববর্ষের উত্থান পুনরুত্থানের গল্পই বা কী। কিভাবে ছাব্বিশে মার্চ হলো স্বাধীনতা দিবস আর কিভাবেই বা হলো ষোলই ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস? এইসব প্রশ্নের উত্তর একটি ধারাবাহিক গল্প প্রবাহের মধ্য দিয়ে পরিস্ফুট হয়েছে এই গ্রন্থে। মহাত্মা গান্ধীর জীবনপ্রবাহের মধ্যে যেমন রয়েছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন প্রাবাহের মধ্য দিয়েই উৎসারিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এইসবই আমাদের শেকড়ের খোঁজ।’
বাংলা ভাষার জন্মকথা অনুচ্ছেদে লেখক উল্লেখ করেন, ‘প্রায়শই আমরা প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শব্দ দুটি শুনে থাকি। এখন যে অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবাংলা, প্রাচীনকালে এর নাম ছিল প্রাচ্য। তাই আমাদের শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতি ইত্যাদি বোঝাতে আমরা এখনো প্রাচ্যের শিল্প, সাহিত্য বা অর্থনীতি বলে থাকি। আর পাশ্চাত্য অর্থ হচ্ছে ইওরোপ। তাই ইউরোপের কোনো কিছু বোঝাতে পাশ্চাত্যের বলে থাকি।
মগধ রাজ্যের শাসন ও সংস্কৃতির আধিপত্য ছিল প্রাচ্যে। তাই আজকের বাংলা ভাষা মাগধী ভাষা থেকেই এসেছে বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের একটি ভাষা। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষারই একটি শাখা ভারতীয়-আর্য ভাষা। এই ভাষায়ই বেদ রচিত হয়েছে। তাই একে বৈদিক সংস্কৃত ভাষা বলা হয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে মাগধী প্রাকৃত, যা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয় বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। মাগধী প্রাকৃত কোনো মৌলিক ভাষা নয়। এর উৎপত্তি বৈদিক সংস্কৃত থেকে। মাগধী প্রাকৃত বলে কোনো ভাষা আজ আর ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু ধর্মশাস্ত্র বেদ সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছে বলে সংস্কৃত ভাষার চর্চা এখনো রয়েছে। তাই আমরা বলবো বাংলা ভাষার উৎস সংস্কৃত। সংস্কৃত থেকেই বাংলা ভাষা এসেছে।’
উল্লেখ্য, কুইন্স লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা বুক ক্লাব গড়ে ওঠে এ বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রতি মাসে কর্তৃপক্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাংলা বই নির্বাচন করে, সদস্যরা বইটি লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করে সারা মাস পাঠ করেন এবং মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে একত্রিত হয়ে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন। একজন মূল আলোচক থাকেন, তিনি লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন, অন্যরা মুক্ত আলোচনা করেন। এই আলোচনা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গ্রন্থটি সম্পর্কে নিজস্ব পাঠলব্ধ ধারণা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার সুযোগ পান।