বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র আলোচনা ও স্বাধীনতার কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। ২৪ মার্চ কুইন্স লাইব্রেরির বাংলা বুক ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির আায়োজক ‘পাঠকের পাতা’। পাঠকের পাতা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ও সংসদ সদস্য কাজী রোজী। প্রধান বক্তা ছিলেন ওবায়েদুল্লাহ মামুন। প্রধান বক্তা তিনটি পরিপ্রেক্ষিত থেকে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এগুলো হলো, গ্রন্থটির পরিচিতি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম। অন্যান্যের মধ্যে আরও আলোচনা করেন আহমাদ মাযহার, কাজী জহিরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ জাহিদ, ফরহাদ ইসলাম, ড. বিলকিস রহমান দোলা, মুক্তি জহির, নজরুল কবীর প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি কাজী রোজী বলেন, ‘আজ আমার প্রবাসী বন্ধুদের সঙ্গে এখানে একত্রিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ওপর আলোচনা করতে পারা আমার জন্য এক বিরল অর্জন ও সম্মানের ব্যাপার। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে আরও বেশি কিছু শোনার আগ্রহ আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে। এ কথা আজ সবাই বলে গেলেন। কেননা, তার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। এই অনবদ্য গ্রন্থটি বাঙালি পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে, যেমন ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
আহমাদ মাযহার বলেন, গ্রন্থটির ত্রুটি বা ভুল নয় একাডেমিক আলোচনা করা যেতে পারে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কলেবর বা আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে এর সময়কাল আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি একথা সত্য, তবে কারাগারের রোজনামচা এবং চীন ও পাকিস্তান সফরের ওপর আরও দুটি প্রকাশিতব্য গ্রন্থপাঠ আমাদের আরও কিছুটা পাঠতৃষ্ণা মেটাবে।
কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মকাল থেকে মধ্য পঞ্চাশ অবধি সময়ে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিস্তারিত বর্ণনা এই গ্রন্থে আমরা পাই, যদি মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সময়ের বর্ণনা পেতাম, তাহলে আমরা আরও অনেক উপকৃত হতে পারতাম। এই না পাওয়ার দুঃখ আমাদের থেকেই যাবে।
মুক্তি জহির বঙ্গবন্ধুকে একজন প্রাজ্ঞ ও সাহসী নেতাই শুধু নয়, একজন বড় লেখক হিসেবেও অবিহিত করেন। আবদুল্লাহ জাহিদ বলেন, পাঠকের পাতা সময়কালকে বিবেচনায় রেখে একটি উপযুক্ত গ্রন্থ নির্বাচন করে এবং সেই গ্রন্থের ওপর আলোচনার আয়োজন করে। মার্চ মাসের ১৭ তারিখ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং এটি আমাদের স্বাধীনতার মাস, কাজেই এই মাসের জন্য আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটিকেই সবচেয়ে উপযুক্ত বিবেচনা করেছি।
উল্লেখ্য যে, ২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে আসে। খাতাগুলো ছিল পুরনো, জীর্ণ ও লেখা অস্পষ্ট। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের কথকতা এই খাতাগুলোতে লিখেছিলেন। সেই লেখাগুলোকে একত্রিত করে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ২০১২ সালে ৩২৮ পৃষ্ঠার এই আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি প্রকাশ করে।
বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। গ্রন্থটিতে রয়েছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসার কথাও, যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে তার পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনা বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার কবিতা আবৃত্তি করেন জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী নজরুল কবীর, বিলকিস রহমান দোলা, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, সাবিনা নীরু, শুক্লা রায় এবং গোপন সাহা।
পাঠকের পাতা গঠিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষকতায়। এই বাংলা বুক ক্লাবটি প্রতি মাসে একটি বই নির্বাচন করে সদস্যদের পড়তে দেয় এবং মাসে একদিন সকলে একত্রিত হয়ে বইটির ওপর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। কর্মসূচিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বই ব্যবচ্ছেদ’। এপ্রিলের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে কাজী জহিরুল ইসলাম রচিত ‘শেকড়ের খোঁজ’। আগ্রহীরা কুইন্স লাইব্রেরির হলিস শাখা থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী ২১ এপ্রিল শেকড়ের খোঁজ গ্রন্থের ওপর আলোচনা ও নববর্ষের কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে।
পাঠকের পাতার সদস্যদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।