আমার নামটি খুঁজি আমি
নবজন্মের পরবর্তী পরিচয়ের সূত্র খুঁজে
আরেক জন্ম বিশ্বাস করা কি অপরাধ?
মানব জীবন যদি পাশব আগ্রাসনে অনন্য স্বাদ
হৃদয় তবে কেড়ে নেবে
গ্রস্ত মানুষ আর তাদেরই কাঁটার বীথি
সত্তার পুঁজি
নিমেষে ক্ষয় শপ্তক্রিয়ায়
তবুওতো জন্ম নেবে বিবর্তনে মহাকালে
আরেক জন্ম বিশ্বাস করা ভ্রান্তি নাকি?
আজো শুনি মুখোশ পরা বল্লম হাতে ডাকাত দলের
বেতাল নগ্ন পদধ্বনি
ক্রমে হারায় ক্রমে হারায় নিমেষেই ফের কানে আসে
মৃত্যু নিনাদ
মাটি খামচে অনিচ্ছাতে যায় পাতালে
অলৌকিক ধর্মের পাহারায়।
০২.
আমার একটি নাম খুঁজি
অবিভেদ্য একান্ত নিজের। নামহীন পরিচিতি
আর কতদিন!
কে বলবে কী নাম আমার? নামটি জন্মের কালে
হারিয়ে খোসার মতো উধাও এখন,
হয়তো কোথাও আস্তাকুঁড়ে ইতর প্রাণীর সাথে
আপস করছে যেন ওরা কামড়ে না দেয় তাকে
সন্ত্রাসীর পলিথিন পেঁচানো অস্ত্রের রূপ ধরে
অমরতা খোঁজে
ধ্রুবতারা যেন চন্দ্রতিথি গুপ্ত করে রাখে আপন ঠিকুজি
তাকে নিয়ে মরি আমি প্রবল সঙ্কোচে
তার চেয়ে অধিক রূপসী দেখি পাশের গলিতে বাস করে
জানি না তো আমি কার, আমার হৃদয়ে আছে কার অধিকার
নৈঃশব্দের অভাবে সন্ধানী চোখ বুজে আসে
নীরবতা আজকাল দেখে নাতো কেউ
করোটিতে অমানিশা অনন্তের ঢেউ
দিবাদৃশ্য ক্ষয়ের কারণ, আলোর কিরীচে ভয়
প্রকৃতি সমাজ বাস্তবের, নিজের ভেতর থেকে দুর্নিবার
সরে যাই অন্ধকার প্লাটফর্মে আলোর কিরীচে সত্য দেখা
ঝাঁপসা চোখের জানালায়, দূর থেকে নাড়ে এক হাত
আরো দূরে যায়
উপকূলে স্বেচ্ছাসেবী যুবকের হাত নড়ে
মৃত তরুণীর ঠাণ্ডা স্তনে
সারি সারি লাশ ভাসে, নাক কান ছেঁড়া; কব্জিতে আঁচড় দেখি
বিবাহের স্মৃতিরেখা হাতে ও গলায়
বঙ্গসাগরের এই দেশ থেকে পালিয়েছি আমি?
নাকি অন্য কেহ?
খুদ-কুঁড়োর বাসনে কি থাকবে পড়ে মাতৃস্নেহ
নামহীন সর্বনামী?
০৩.
অন্ত্রের ভেতর আমার ব্যাধি কোন খানে
জানি না জানা নেই
বৃত্তের সংখ্যা, কার বন্ধনে কে আবদ্ধ জানি না
পাহাড়ী সরোবরে সবুজাভ জলের
শ্রাবণের ফোঁটার ধ্বস্তাধ্বস্তির মতো।
কথা দিচ্ছি আজো
মৃত্যুর পূর্বে ঋণ করা নামটি ফিরিয়ে দিয়ে যাব
কাব্য পরিচয়, অর্থের গন্ধ, প্রণয়ের আংটি
শিক্ষা দেওয়া নেওয়া, হতাশা নিষ্ফল, আঞ্চল আলু চাষে
উদীচী গোলার্ধ জলবায়ু আগ্রাসনে
এল নিনো লা নিনা
পশ্চিমী হাওয়া ধ্বংসে ও নির্মাণে।
০৪.
যে পালঙ্কে কেটেছিল মায়ের বাসর
কোন জানালায় দেখেছিল এ জাতিস্মর!
মনে কি হয়, নাকি হয় না? পিতার শুভ্র বিদায়কালে
মায়ের চোখে পড়েছিল আপন এক নাম
রাধার সন্তান
ভিন্ন এক স্থান জুড়ে আছে অন্তর্ভূত দুর্ধর্ষ কাম
ফ্যাকাশে এক দীর্ঘ অতীত রঙকরহে লিপ্ত আজো
অতি গাঢ় চক্রজালে
আদিম দুটি ছায়া কোথায় পড়েছিল। নির্বাক নিথর
দেখেছিল স্বল্প আলোয় মনে হলে বিচলিত হয় জাতিস্মর
০৫.
এই খানে আঁচলের তলে
মোমশিখা জ্বলে
কোথাকার এক বিহ্বলে
শূন্যের ভেতর কথা বলে।
আজো বলে যায়
নিষ্কম্প শিখার ভেতর উল্লম্ফের ছায়া
পার হয়ে যায় নির্দ্বিধায়
সে নীড় দ্বিধায় অতিক্রম করেছিল
শীতল কঠিন অস্তাচলে
অচেনা যখন মনে হয়
. পরিচিত মুখ
পুরনো পাঁচিল থেকে যুগ যুগ ধরে
ভেসে আসা পেচকের ডাক
মিশেছে যখন বিশ্বে—সান্ধ্য চরাচরে
সমাজের গূঢ় পঞ্চভূতে।
দূরাগত নক্ষত্রের আলো
মানুষের হিস্যায় সংস্কৃতির দাবিদারে
আসলে, আসলে কার?
০৬.
সে শুধু একবার বলতে চেয়েছিল
দয়িতাকে একটু অপেক্ষা করতে আজ
বড় বেশি ব্যস্ত, বস্তু-বাস্তবে ঘেরা
ধ্বংসের জন্যই কিনতে হয় কিছু তাকে
সমবস্তু আর প্রতিবস্তু সমাহার।
টোকাইয়ের মতন চিরচেনা জগতে কাজ
নিত্য করে যায়, উদয়াস্ত সমাজেরা
একতার মাত্র বলতে চেয়েছিল
. অল্প অপেক্ষা আর।
এর মাঝে গিয়েছে মায়ের সমাধির পাশে
কোন পুরুষ তার দিয়েছে পরিচয়?
আর কিছু পারেনি উত্তরাধিকার
একবার মাত্র বলতে চেয়েছিল
এক পায়ে দাঁড়াতে পারছিল না তাই
একটু দয়া করে—বলেছিল একটু আর
দেরি করো প্রেয়সী, নামটি জেনে আসি
হাতটা ধরবে কী নামে?
নামটি খুঁজে পেতে, সমাজ প্রয়োজনে
সে সমাজ কোথায় যেখানে মানুষেরা
গুণেই পরিচিত নামে মাত্র নয়?
সময় প্রয়োজন আরো।
০৭.
তুমি তো আর ক্ষমতাবান ততটা নও
শিল্পাঞ্চলের সড়ক পেরিয়ে গলির মোড়ে
মধ্যরাতে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরপ্রিয় বুড়োটিকে
ইচ্ছামতো একটা চড়ে বীর্যচুরি বন্ধ করে দিতে পার।
তেমন একটা হাতের দরকার আজো
কালিমাখা হাতের ছাপই সাক্ষ্য দেবে
বিশ্বে তোমার কী পরিচয়
নামটি তুমি নাইবা জানো
তবু তোমায় কে আটকাবে রোদের গায়ে ফেলতে ছায়া
ছায়া কি তার ভিন্ন হবে যে বসেছে ওপর তলা?
ওপর-নিচের দিক ও দিশা
জোছনা রাতের কূহক মায়া!
গলির মোড়ে আমরা সবাই ভিড় করে যাই
কে জানে কার মূর্তিখানি দাঁড়িয়ে যাবে যেখানে কাল
শ্রমিক শিশু—গতবারের কুকুর মরার—ত্রিকোণের ঠিক মধ্যখানে
লালচে কালোয় মিশে গেল
বিশ্বব্যাংকের দেনাশোধে।
০৮.
সাজানো বাসরে প্রতীক্ষিত নববধূ
আর তুমি প্রতীক্ষার মহাকাব্যে পংক্তি যোগ করো
অশেষ সূর্যটা মাথার ওপর জ্বলে
কবি হয়ে যেতে চায়
আঁধারের অপেক্ষায় মহীসোপানের বুক ছুঁয়ে
নোঙরটি যায় ফিরে
ইলেক্ট্রনের ডিজিট স্পন্দন নিভে যায় যুগ সভ্যতায়
ঘড়ির ভেতর তবু—আশার বিন্দু স্বপ্ন দেখায়
হে কবি, আপনি আনন্দের মহাকাব্য
রচনা করতে গিয়ে ঠেলে দেন কেন বৈপরীত্য
চরিত্রের মাঝে বিতরণ করছেন সব শব্দ
শব্দ পদ, সমাস-কারক সেখানে কি আছে নামটি আমার?
লাবণ্যবতীর ঝোলানো কাঁধের মতো
বিহ্বলতা ভর করে।
০৯.
তোমার সন্তান বসে আছে মায়ের চতুর্পাশ্ব ঘিরে
জন্ম নেবে পিতা, সূর্য ডুবে গেলে
সরে যাও তোমরা, বাবা জন্ম নেবে
মায়ের অন্তরজুড়ে
কিন্তু এ কী ধ্বনি! বাঁশবাগানে ঘাত! শুনছ কান পেতে
বিবর্ণ সমাজে বুনে যাচ্ছে তাঁতি ধবধবে কাপড়
বর্ণহীন অতি সহজ সরলতা
কোনো টার্মিনালে অপেক্ষা করে শেষে হয়তো ফিরে গেছে
তোমার প্রিয়তমা
যার শাদা খাতার শূন্য পাতা ভ’রে
অচেনা অক্ষরে লেখা ছিল নির্বাচিত
কতিপয় শব্দে—এক অন্ধ নাম
তোমার প্রয়োজনে।
১০.
তবে
নাম কি আমার মিশে আছে
সব মানুষের ভেতর?