॥কিস্তি-২॥
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশৃঙ্খল নীতি বিশ্বব্যাপী এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক টাইমস-এর পক্ষ থেকে নোয়াম চমস্কির সাক্ষাৎকার নেন সাংবাদিক জর্জ ইয়ান্সি। দীর্ঘ একমাস ই-মেইল চালাচালির পর জর্জ ইয়ান্সিকে সময় দিতে রাজি হন চমস্কি। সাক্ষাৎকারটির বেশিরভাগই ই-মেইলে নেওয়া হয়। চিন্তাসূত্রের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন রবি আচার্য্য। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় কিস্তি:
জর্জ ইয়ান্সি: সবচেয়ে ভয়াবহ কোন বিষয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা?
নোয়াম চমস্কি: আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও পারমাণবিক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে রিপাবলিক নেতারা পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা যেন উঠেপড়ে লেগেছে পৃথিবীতে বাসযোগ্য পরিবেশ ধ্বংস করার জন্য। আমরা শুধু এ ব্যাপারে কথাই শুনছি। কিন্তু কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখছি না। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী কার্যক্রম ব্যবস্থা স্থানীয় অঞ্চলে ট্রাম্পের এই খারাপ প্রকল্প রুখে দিতে করতে পারি।
অন্যদিকে পারমাণবিক যুদ্ধের ব্যাপারে সিরিয়া ও রাশিয়ার সীমান্তে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে, যা যুদ্ধের ও অচিন্তনীয় ঘটনার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। তারপর ট্রাম্পের ওবামার পারমাণবিক প্রকল্প আধুনিকায়নের কার্যক্রম আরও বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। সম্প্রতি আমরা জেনেছি—আমেরিকার পারমাণবিক প্রকল্প আধুনিকায়নের কার্যক্রম ভীতি সৃষ্টি করার সরু সূতা বপন করা শুরু করেছে, যাতে পৃথিবীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ভে। আর এ বিষয়টি প্রবন্ধ Bulletin of the Atomic Scientists আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আলোচক বলেছেন—আমেরিকার পারমাণবিক প্রকল্প আধুনিকায়নের কার্যক্রম ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হত্যা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে তিনগুণেরও বেশি। আশা করা যায়—এতে করে যদি কোনোক্রমে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়, তবে আমেরিকান এমন সক্ষমতা আছে যে, খুব সহজেই শত্রুপক্ষের অস্ত্রসম্ভার ধ্বংস করে যুদ্ধ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর গুরুত্ব খুবই পরিষ্কার। এতে বোঝা যায়—ক্রাইসিসের সময় যখন দেখা যাবে সবার হাতেই পারমাণবিক বোমা আছে, রাশিয়ান আর্মির নিয়ন্ত্রকরা যখন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে গিয়েও টানতে পারবে না, ঠিক তখনই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ রক্ষার একমাত্র উপায় হতে পারে এই ব্যালাস্টিক আক্রমণ। আর এর মধ্য দিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের দ্বার প্রান্তো পৌঁছবে।
জর্জ ইয়ান্সি: তাহলে তো মারাত্মক ভয়ের কারণ হতে পারে!
নোয়াম চমস্কি: এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতন প্রতিবাদ বড় ধরনের ভয়াবহ অঘটনকে বন্ধ করতে পারে। এর ফলে ওয়াশিংটন বাধ্য হবে যেকোনো সমস্যা কূটনেতিকভাবে সমাধান করতে। আর কূটনৈতিকভাবে সহজেই যেকোনো সমস্যার সমাধান করা যায় শক্তি ব্যবহার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুদ্ধ চাপিয়ে না দিয়ে। এমনকি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সমস্য সমাধানেও এ কৌশল কাজে আসতে পারে।
জর্জ ইয়ান্সি: কিন্তু এই অবিচারের ব্যাপারে কী হবে? যে অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি ব্যাপকভাবে সমালোচনা করে আসছেন। আর আপনার মতে এই অন্যায় মানুষের মনে ন্যয় বিচার উদ্রেগ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়? আপনার কি মনে হয়—এ ধরনের অন্যায় বিস্তারে কোনো ধর্মভিত্তিক অনুপ্রেরণা থাকে? আর যদি এ অন্যায় বিস্তারে ধর্মের প্রভাব না থাকে, তবে তার কারণ ব্যখ্যা করুন?
নোয়াম চমস্কি: এ যুদ্ধ নামের অবিচারের প্রসারে কোনো ধর্মভিত্তিক অনুপ্রেরণা থাকে না, থাকে না কোনো শক্তিশালী কারণ। যে কেউ ধর্মীয় অনুভূতি ও অনুপ্রেরণা তাদের কার্য উদ্ধারে ব্যবহার করতে পারে নিজেকে ধর্মেও সবচেয়ে বড় অনুসারী হিসেবে প্রচার করে। আবার সবচেয়ে হিংস্র কর্মকাণ্ডেরও বৈধতা আদায় করতে পারে। আমরা অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থগুলোতে—শান্তি স্থাপনে, ন্যয়বিচার ও দয়া প্রদর্শনের প্রতি উৎসাহিত করতে দেখি। পাশাপাশি আমরা বড় ধরনের গণহত্যার মধ্য দিয়ে কঠোর অনুশাসনও দেখতে পাই। তাই সচেতন বিবেকই আমাদের পথ দেখাতে পারে, এই দু’য়ের মধ্যে যেকোনো রাস্তা পছন্দ করার ক্ষেত্রে।
জর্জ ইয়ান্সি: মানবতার এ ধরনের ভোগান্তির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়াকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? আমার ছাত্রদের অনেকেই জানিয়েছে—তারা মানবতার এ বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এই অত্যাচার বা ভোগান্তি সহ্য করার চেয়ে এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়া আরও কঠিন। তারপরও অনেকে পৃথিবীর এই ভোগান্তির ব্যাপারে উদাসীন।
নোয়াম চমস্কি: আমার সন্দেহ, যারা মানবতার ভোগান্তির ব্যাপারে উদাসীন, চাই সেই নিকটে বা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে হোক—তারা কিছুটা হলেও অসচেতন। হতে পারে তারা কোনো মতার্দশ ও ভাবার্দশ দ্বারা অন্ধ। তাদের জন্য বলতে পারি—গতানুগতিক বিশ্বাসের সংবিধানে সমালোচক দৃষ্টিতে দেখুন, চাই সেক্যুলার হোন বা ধার্মিক হোন। তাদের প্রশ্ন করার মানসিকতাকে উৎসাহিত করতে, বাড়াতে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে পৃথিবীকে একবার দেখা ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে? তখন সত্য সরাসরি প্রকাশিত হবে। আমরা যেখানেই বাস করি না কেন, হতে পারে ঘরহীন মানুষ শীতে কাঁপছে, কিছু টাকার জন্য ভিক্ষা করছে খাবার কিনতে। এমন আরও কত উদাহরণ চোখ মেললেই দেখতে পাবেন।
জর্জ ইয়ান্সি: আমি আপনার দ্বিতীয় তকে সাধুবাদ জানাই। কারণ আপনি বলেছেন—মানুষের ভোগান্তির চিত্র আমাদের দৃষ্টির খুব বেশি দূরে নয়। কাছেই রয়েছে। ট্রাম্পের আলোচনায় আসি। আপনার মতে ট্রাম্প অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তি, যার ব্যাপারে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। আমিও এমনটাই বিশ্বাস করি। এ কারণে বড় ধরনের পরমাণু কোনো দুর্ঘটনার ব্যাপারে শঙ্কিত হতে পারি আমাদের এই সময়ে?
নোয়াম চমস্কি: আমি শঙ্কিত। অমি সেই সীমিত-সংখ্যক লোকদের মধ্যে একজন, যার এই ভয় আছে। আর সবচেয়ে বিখ্যাত যে ব্যক্তি আমার মতো শঙ্কা প্রকাশ করেছেন—তিনি হচ্ছেন উইলিয়াম পেরি। তিনি বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম দক্ষ পরমাণূ পরিকল্পনাকারী প্রযুক্তিবিদ। সেই সঙ্গে বহুবছরের যুদ্ধপরিকল্পনার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি কিছুটা চাপা স্বভাবের, সর্তক ও অতিরিক্ত কথা বলতে অনভ্যস্ত। তিনি প্রায় অবসর নেওয়ার কাছাকাছি। কারণ তিনি এই বলে ঘোষণা দিয়েছেন—তিনি ভীত; বড় ধরনের চরমপন্থী ও বিভিন্ন লবির চাপ বৃদ্ধির কারণে। তিনি ভীত এই বড় ইস্যুগুলোর চিহ্নিতকরণে ব্যর্থতার কারণে। তার ভাষায়, বর্তমানে পরমাণু বিপর্যয় ঘটার মতো আশঙ্কা শীতল যুদ্ধকালীন সময়ের চেয়ে বেশি। আর অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে পুরোপুরিভাবে অসচেতন।
১৯৪৭ সালে অ্যাটমিক সাইন্স বুলেটিন তাদের জনপ্রিয় Doomsday Clock প্রতিষ্ঠা করেছে। যাতে সহজেই হিসাব করা যায় যে, কোন মধ্য রাতে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হওয়া থেকে ঠিক কতটা দূরে আমরা। ১৯৪৭ সালে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন—আমরা এমন মধ্যরাত থেকে মাত্র সাতমিনিট দূরে। ১৯৫৩ সালে তারা মধ্যরাতে পরিবর্তে জানালো—আমরা মাত্র দুই মিনিট দূরে। কারণ সেই সময় আমেরিকা ও রাশিয়া হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এরপর থেকে ঘড়ির কাটা পেছাতে থাকে, আর কখনো এতটা বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেনি। আর জানুয়ারিতে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ঘড়ির কাটা মধ্যরাত থেকে ২.৫০ মিনিটে এসে পৌঁছেছে। ১৯৫৩ সালের পর এখন তা সর্বোচ্চ বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। এখন বিশ্লেষকরা পরমাণু যুদ্ধের বিষয়ে কেবল শঙ্কিত নয়, বরং রিপাবলিকানদের পরিবেশগত বিপর্জয় বাড়ানোর জন্য ঐকান্তিক ইচ্ছা নিয়ে ভীত। পেরি যুক্তিসঙ্গত কারণেই ভীত। আমাদের তার মতো ভীত হওয়া উচিত। শুধু এ কারণে নয় যে, এই ব্যক্তি বোমার বাটনে হাত রেখেছেন, তার অতিবাস্তববাদী সহযোগীদের ব্যাপারেও।
জর্জ ইয়ান্সি: অনির্ভরযোগ্যতার পরও ট্রাম্পের কিন্তু ভালো সমর্থন আছে। তার প্রতি জনতার এ ধরনের স্বেচ্ছা সমর্থন কি কখনো ভালো পরিবর্তন আসার কারণ হতে পারে?
নোয়াম চমস্কি: আমি এই কাজে স্বেচ্ছা সমর্থন দেওয়া হচ্ছে—তা বলতে পারি না অনেক কারণে। আপনাকে বুঝতে হবে—তার সমর্থক কারা? কারা তার শক্তি? তাদের অধিকাংশরাই ধনী। তিন চতুর্থাংশের আমেরিকার আয়ের অর্ধেকের মতো আয় করেন। এক তৃতীয়াংশ আয় করে বছরে ১ লাখ ডলারের চেয়ে বেশি। এভাবে তারা ১৫% সবচেয়ে বেশি আয় করে। আর এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬% এর হাইস্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা আছে। তারা সবাই আশ্চর্য্যজনকভাবে শেতাঙ্গ, বয়স্ক আর এ কারণে ঐতিহাসিকভাবে তারা বেশি সুবিধাভোগী।
জর্জ ইয়ান্সি: রাশিয়ান হ্যাকিংয়ের ব্যাপারে আমরা যে আলোচনা করি, তা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ? যেমন রিপাবলিকান প্রচারণা যে সামাজিক সংহতি ধ্বংস করার জন্য রাশিয়া এটা করেছে; বিশ্ববাসীর বিরোধিতার মুখে আমরা যা বলে বেড়াই, তা কতটুকু গুরুত্বের দাবিদার?
নোয়াম চমস্কি: রাশিয়ান হ্যাকিংয়ের ব্যাপারে এই যে আলোচনা তা কি গুরুত্বপূর্ণ? না যেমন রিপাবলিকান প্রচারণা যে—সামাজিক সংহতি ধ্বংস করার জন্য রাশিয়া এটা করেছে; বিশ্ববাসীর বিরোধিতার মুখে আমরা যা বলে বেড়াই, তা গুরুত্বপূর্ণ? না কি নিভে যাওয়া পারমাণবিক যুদ্ধকে পুনরায় শুরু করা গুরুত্বপূণ? না কি এর দ্বারা আমরা আরও ছোট অপরাধ যে ১০ মিলিয়ন মানুষকে স্বাস্থ্যবীমা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করে কর্পোরেট শক্তি ও ব্যবসায়ীদের আরও ধনী হতে দিচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ? না কি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ধ্বংস করে আমরা অর্থনৈতিক মন্দা রুখতে আবারও প্রস্তুত হচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ? এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্ন তোলা যায়। এটা খুবই সহজ—আমরা যদি এর কিছু অংশের ওপরও জোর দেই, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে সবার জন্য। তখন আর এই হ্যাকিংয়ের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার সময় থাকবে না।
জর্জ ইয়ান্সি: এসবই জাতি হিসেবে আমাদের স্ববিরোধী অবস্থানকে চিহ্নিত করে?
নোয়াম চমস্কি: অ্যান্থনি ডিমিয়াগোর রিপোর্ট ও তার সতর্ক অনুসন্ধান আমাদের সহজ তথ্যভাণ্ডার দিয়েছে এ ব্যাপারে। ট্রাম্পের ভোটাররা টিপিকাল রিপাবলিক, এলিট শ্রেণীর ও তারা প্রো-কর্পোরেট ও প্রতিক্রিয়াশীল সামাজিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অভ্যস্ত। তারা ধনী ও তাদের একটি বিরাট অংশ আয়ের দিক থেকে দেশের সুবিধাভোগী মানুষদের দলে ছিল ২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দার আগে। এ কারণে তারা বর্তমানে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা অনুভব করে। ২০০৭ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের লোক প্রায় ১০% এর নিচে নেমে এসেছে। এটি অবশ্য সত্য নয় সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার বর্ণবাদী ও শেত্বাঙ্গ হওয়া ভালো কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি। এদের অধিকাংশই ট্রাম্পের সমর্থক। আর রিপাবলিকান ও ট্রাম্প এদের ভাবাদর্শ সঙ্গে তেমন ভিন্ন মত পোষণ করে না। যদিও এদের অবস্থা উন্নয়নে আমরা কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে বললে সমালোচনার শোর ওঠে।
ট্রাম্পের আরেকটা সমর্থক দল আসে শিল্পপতিদের কাছ থেকে, যা কয়েক দশক ধরে দুই রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই সত্যি। তার আরও সমর্থন রয়েছে গ্রামে যেখানে শিল্পায়ন ও স্থায়ী চাকরির সম্ভাবনা একেবারেই নেই। এদের অনেকেই ওবামাকে ভোট দিয়েছে। বিশ্বাস করেছে—ওবামার বক্তব্য আশা ও পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তার সহজেই হতাশ হয়ে পড়ে। আর তাদের প্রতিযোগী জনগোষ্ঠীর ওপর হিংস্র হয়ে পড়ে। শুধু আশার সম্ভাবনা জাগিয়ে, অতীতের নেতারা এদের উদ্ধার করতেন।
আর একটি বিবেচনার বিষয় হতে পারে বর্তমান তথ্যপ্রবাহ। যদি কেউ এই তথ্যপ্রযুক্তি নিজের মতো ব্যবহার করতে পারে, তবে অনেক কিছু সম্ভব। যেমন তার সমর্থকদের আরেকটি উৎস ফক্স নিউজ, এফএম রেডিও ও অন্যান্য বিকল্প গণমাধ্যম। ট্রাম্পের অপকর্ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে খুব সহজেই এসব মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়—এসবই দুর্নীতিবাজ এলিট শ্রেণীর ষড়যন্ত্র। আর এটাও সহজেই প্রমাণ করা যায়—এই উচ্চবিত্তরা সবাই তার নিকৃষ্ট শত্রু।
জর্জ ইয়ান্সি: এক্ষেত্রে আমরা কী ধরনের সমালোচনামূলক বুদ্ধিবৃত্তিক (ক্রিটিকাল ইন্টিলিজেন্স) প্রচেষ্টার দুর্বলতা দেখি? দার্শনিক জন ডেওয়ি যে ধরনের প্রয়োজনীয় নাগরিক দায়িত্ববোধের কথা বলেছেন—তার কি অভাব দেখতে পাই?
নোয়াম চমস্কি: আমরা বরং সমালোচনামূলক বুদ্ধিবৃত্তি কী, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারি। লিবারেলদের মতে—এ শতকের সবচেয়ে রাজনৈতিক অপরাধ হচ্ছে আমেরিকান নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ। এর প্রভাব কী হতে পারে, তা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। যেমন কর্পোরেট, ব্যক্তি সম্পদের হস্তক্ষেপের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যায় না। এগুলো কোনোটাই অপরাধ না। এ সবই গণতন্ত্রের অংশ। এ কারণে আমরা অগ্রাহ্য করতে শিখি আমেরিকার নিজস্ব হস্তক্ষেপ বিদেশের নির্বাচনে। এমনকি রাশিয়ার নির্বাচনেও আমেরিকান হস্তক্ষেপ। যে একটু চোখকান খোলা রাখে, সে সহজেই এসব বিষয় বুঝতে পারে।
(শেষ)