দূরত্ব -০১
বন্ধ ছিল, দরোজা দুটো এখন খোলা
ফিরে যাবে? যাও
জেনো, পৌঁছাতে পারবে না
যত কাছেই হোক
পল্টন থেকে বিজয়নগর।
জীবন মানে মৃত্যু,
মৃত্যু মানে কি?
জানতে চেয়ে চিবুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে
যেদিন সাঁতারের গল্প বলেছিলাম
সেদিন থেকে ঝোড়ো বাতাস আর বৃষ্টি
বিড়ালের কান্না প্রতিটি ভোরে
দরোজা দুটো বন্ধ
বাইরে অপেক্ষায়
সাঁতারের গল্প আর অন্ধকার।
দূরত্ব-০২
সেগুন বাগিচা থেকে শান্তিনগর। মাথার ওপর গাঢ় ঘন নীলাকাশ। আলোর ফোয়ারায় উদ্ভাসিত চিরচেনা চরাচর। অথচ বারোতলা ভবন পেরুতেই নিভে গেল সব আলো। অন্ধকারে ঢেকে গেল সুদূর নীল জানালা। সঙ্গে থাকা গন্ধরাজের চারাগুলো যেন একেকটা গোখরোর ফনা। বাস, রিকশার হর্ন ফাটাচ্ছে বোমার বিস্ফোরণ। উঁচুতলা ভবনগুলো সব যুদ্ধ বিমান। পিঁপড়ের দল ছিটকে যাচ্ছে গোলার আঘাতে।
গন্ধরাজের চারা হাতে আমি রাস্তার একপাশে। আকাশ দেখছি। শরতের ঝকঝকে নীলাকাশ। মাঝে-মাঝে সাদা মেঘের ঢেউ। আমার চোখ এড়িয়ে একখণ্ড কালো মেঘের চাঁই আকাশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে উঁকি দিয়েছে, এইমাত্র। আমি কি দেখেছি? দেখিনি, দেখব না।
গন্ধরাজের চারাসহ আমার ডানহাতের কব্জি খণ্ডিত, রক্তাক্ত। কাটালাশের মতো তড়পাচ্ছে মাটিতে, রাস্তায়। বাউল সুরের মরমিয়া ভাঁজ আমার দু’ঠোঁটে। পা’দুটো শক্ত তাল গাছ। কিন্তু আমাকে যেতেই হবে। কারণ, ঈশান কোণের এক স্বপ্নবাজ ধ্বনি আমাকে ডাকছে। যার কাছে রাধাচূড়ার সবুজ আদর আর আছে অবাধ জোছনায় ছুটে চলা বাতাসের ঘোর।
আমি কি যেতে পারব? সেগুনবাগিচা থেকে শান্তিনগরের দূরত্ব কতটুকুইবা আর?
কবিতালয়
হাতের তালুর ভেতর জমে ওঠা নিভৃতির মায়া
কাটাতে পারিনি বলে আজও আমি দলছুট
শিকারির তীর ঘেঁষা নির্লিপ্ত বাতাস হয়ে
মিশে থাকি অরণ্যের দীর্ঘশ্বাসে
আমি বাঁচি, বেঁচে থাকি
চোখের আড়ালে জেগে থাকা বেদনার নম্রতায়
ইঁদুর দৌড়ের মহাস্বাগতিক ভিড় থেকে
নিজেকে সরিয়ে কুয়াশা জড়ানো হেমন্তের শ্লথ গান
বুকে নিয়ে ছুটে যাই
মরে আসা ওই দূর নদীটির পাড়ে।
সন্ধ্যা নেমে এলে দিনানুদিনের অসহ্য পীড়নের দায়
কাঁধে নিয়ে ফিরে আসি
না, তোমাদের ভন্ডামির নিরালম্ব ছায়াস্রোতে নয়
আমারই একান্ত বোধের সেই নিভৃতির মায়া ভেজা
নিঃশব্দ সৃজনে—
ভূমিবিদ্যা নয়, আমার কবিতালয়ের মূল থিম
মানবিক নির্জনতা।