অনুবাদ: মিছবাহ পাটোয়ারী
সম্ভবত তিনি ছিলেন রুশ ঔপন্যাসিক ইভান তুর্গেনেভ। সেটা যদি না হয় তাহলে ফরাসি লেখক অ্যাডমন্ড দে গনকোর্ট। তিনি বলেছিলেন, মানুষ যখন একসঙ্গে খাবার খায়, তখন তারা নারী ও ভালোবাসা নিয়ে কথা বলে। যে কোনোভাবেই হোক, কানাডীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ইহুদি লেখক সল বেলো’র ক্ষেত্রেও এটা ছিল সত্য। অন্তত, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে তার সম্পর্কে আমি এটুকুই জানতাম।
১৯৭৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পান সল বেলো। পুরস্কারের অংশ হিসেবে নগদ পান এক লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে তার তৃতীয় স্ত্রী যখন তার কাছে আইনি প্রক্রিয়ায় অধিক পরিমাণে অর্থ দাবি করতেন, নোবেল পুরস্কারের অর্থ থেকেও তিনি তার এই সাবেক স্ত্রীকে পরিশোধ করতেন। অথচ সাবেক স্ত্রীর এমন দাবির সময়েও তার মনে বিশেষভাবে ঠাঁই করে অন্য নারীরা।
সল বেলো’র সাবেক স্ত্রীর মামলাটি যাচাই-বাছাই হচ্ছিল শিকাগোর আদালতে। সলের আশঙ্কা ছিল, বিচারক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন। তার সাবেক স্ত্রীকে আমি কখনো দেখিনি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি যেন আমার পরিচিত কেউ। ওই নারী ছিলেন বেশ চতুর। তিনি সহজেই বানোয়াট গল্প সাজিয়ে বলতে পারতেন। বেলো ছিলেন বিচারকের হাতের মুঠোয়। আর তার স্ত্রীর ভরসা ছিল বেলোর অর্থের ওপর। তিনি চাইতেন আদালতের মাধ্যমে যেন তার ভরণপোষণের অর্থ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্তানকে দেওয়া অর্থের ক্ষেত্রেও যেন একই ঘটনা ঘটে।
এটা ছিল কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের এসপেন শহরের ঘটনা। তিনি কিছু কথা শেয়ার করলেন। এটা ছিল মূলত ঠিক কী কারণে তিনি বিচারককে সন্দেহ করেন এবং কেন অবশ্যম্ভাবীভাবেই তার স্ত্রীর দৃষ্টি ছিল তার নোবেলের প্রাইজমানির ওপর এই বিষয়ে।
সল বেলো’র এ সংক্রান্ত গল্পগুলো শুনতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। একইসঙ্গে এ সব গল্পে আমি ঈর্ষান্বিত হতাম। বাকিটা মনে হতো ভয়ঙ্কর মাথাব্যথার মতো। এটা শুধু তার ঘোর নারীবাদী সুন্দরী সাবেক স্ত্রীকে নিয়েই নয়। অন্য নারীদের নিয়েও আমাদের কথা হতো। তাদের কাউকে কাউকে আমি চিনতাম। তাদের সম্পর্কে আমি কী ভেবেছিলাম? এটাই বরং চমৎকার ছিল, তাই না? ওই নারী সল বেলো’র সঙ্গে রোমান্সে জড়াতে চেয়েছিলেন—সল অবশ্য বলতেন, এগুলো আমার শোনা উচিত নয়।
আমি অবশ্যই সলের চেয়ে ছোট ছিলাম। তবে, মাত্র ১০ বছরের। বয়সের এ পার্থক্য থাকলেও আমি তার সঙ্গে বেশ খোলামেলা ছিলাম। তার সঙ্গে আমার তেমন একটা দূরত্ব বা সমস্যা হতো না। আমার কোনো সাবেক স্ত্রী ছিল না। আমরা গ্লেনউডের পর্বত থেকে নিচে নামতাম। সেখানে চমৎকার সময় কাটাতাম।
সল বেলো বলতেন, সবকিছু থেকে দূরে, কিন্তু অল্প কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি এখানে এসে লিখতে পারেন। আমরা একটি কেবিন শেয়ার করতে পারি। বছরের কয়েক মাস তিনি সেখানেই কাটিয়ে দিতে চাইতেন। বলতেন, আমি একখণ্ড অবসর চাই।
সল কিন্তু নারী প্রেমে মজে থাকতেন। ফলে এভাবে নারীদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারতেন না। কারণ, নারীরা ছিল তার কল্পনাশক্তির প্রধান অনুষঙ্গ। তবু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম। আর ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে কিছু জমিও কিনে ফেললাম, এমনকি একটা ঝকঝকে কেবিনও।
সল প্রায় আমাকে লেখালেখির জন্য প্রেরণা দিতেন। কিন্তু আমি লিখতে চাইতাম না। কিন্তু কিছুদিন পরই আমার ভেতরে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করল। লিখতে শুরু করলাম। এটা ছিল আমার ভার্জিনিয়ার স্মৃতি। ওইসব দিনের স্মৃতি তখনকার—যখন আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচিত হই। এরপরই আমরা বিয়ে করি। সল আমাকে এ ধরনের লেখালেখিতে উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে আমি ছিলাম বেশ নতুন। তিনি আমাকে এদিকে নজর বাড়াতে বললেন। আসলে শিল্পের কাছে দাঁড়ালে নিজের ভেতরেও শিল্পরস জাগে। আর শিল্পীর সঙ্গগুণে ভেতরে ভেতরে শিল্পী-ই প্রস্তুত হতে থাকে।